রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব কামরুল আহসান আজ সকালে (১২ এপ্রিল ২০২৩) রাশিয়া আইনসভার নিম্নকক্ষ হিসেবে পরিচিত স্টেট ডুমার নব গঠিত বাংলাদেশ বিষয়ক সংসদীয় গ্রুপের সাথে তাদের আমন্ত্রনক্রমে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। সাক্ষাৎকালে তারা বাংলাদেশ-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ, খেলাধুলা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, তৈরি পোশাক শিল্প, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, কৃষি এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন।
রাশিয়ার পার্লামেন্ট ভবন স্টেট ডুমায় অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ বিষয়ক সংসদীয় গ্রুপের সমন্বয়কারী ও ষ্টেট ডুমার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান মিসেস স্বেতলানা সের্গেইভনা ঝুরোভার নেতৃত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন ষ্টেট ডুমার আইন ও সংসদ বিষয়ক ডেপুটি চেয়ারম্যান মিসেস ইরিনা ভিক্টোরোভনা বেলিখ, ষ্টেট ডুমার সদস্য মিষ্টার নিকোলাই রবার্টোভিচ বুডুয়েভ ও মিষ্টার আলেক্সি সিটনিকভণের। আলোচনা কালে রাষ্ট্রদূতকে সহায়তা করেন দূতাবাসের উপ-প্রধান জনাব ফয়সাল আহমদ ও কাউন্সেলর শুভাশিস সরদার।
বাংলাদেশ বিষয়ক সংসদীয় গ্রুপের সমন্বয়কারী মিসেস স্বেতলানা সের্গেইভনা ঝুরোভা বলেন, রাশিয়া ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক সুদীর্ঘকালের। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কালে ও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাশিয়া বাংলাদেশের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় যে ভাবে সহযোগিতা করেছিল দুই দেশের জনগনের স্বার্থে ভবিষ্যতেও এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে জ্বালানি ও কৃষি, শিক্ষা, খেলাধুলা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে একসাথে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত জনাব কামরুল আহসান বলেন দুই দেশের বহুমুখী সম্পর্ককে আরও সমৃদ্ধ ও মজবুত করতে বাংলাদেশের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাষ্ট্রদূত বলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না পেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আরো বিলম্বিত হতে পারত। সভায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রথাগত এলাকার বাইরে গিয়ে আরও প্রসারিত ও বৈচিত্র্য আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। রাশিয়ার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি এবং রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধিকসংখায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী প্রেরণের সম্ভাবনার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। রাষ্ট্রদূত বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সম্ভাব্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় দুই দেশকে একসাথে কাজ করার এবং এবিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আহবান জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। দুই দেশের সম্পর্কে আরও এগিয়ে নিতে শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সফর বিনিময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রথাগত ও অপ্রচলিত খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দুইদেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় ও সম্প্রসারিত হবে।
পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের পাশাপশি আরো অনেক অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ ও রাশিয়া এক যোগে কাজ করবে বলে ষ্টেট ডুমার সদস্যবৃন্দ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত জনাব কামরুল আহসান তাকে বৈঠকে আমন্ত্রন জানানোর জন্য ষ্টেট ডুমার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ বিষয়ক সংসদীয় গ্রুপের সমন্বয়কারী স্বেতলানা সের্গেইভনা ঝুরোভাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে অব্যাহতভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।