Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

Last updated: 27th May 2019
Press Release

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ৩১ মে তারিখে পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিতব্য চতুর্দশ ইসলামিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন।

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

আসসালামুআলাইকুম।

আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে,  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ৩১ মে তারিখে পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিতব্য চতুর্দশ ইসলামিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। এই সম্মেলনে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র,  অবজার্ভার রাষ্ট্র, ওআইসি প্রতিষ্ঠানসমূহ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান সহ মোট ১৪৮ টি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করবে।

মুসলিম উম্মাহর শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং মুসলিম বিশ্বে উন্নয়ন সাধনকল্পে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) সর্বদাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের বেশ কিছু দেশ শান্তি, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষায় হুমকি, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মুসলিম রাষ্ট্রে বাইরের হস্তক্ষেপ, উত্তেজনা, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, ‘ইসলামোফোবিয়া’ ও মানবিক বিপর্যয় সহ নানা সমস্যার সম্মুখীন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের এবং একই সাথে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সংস্থাটির সম্মিলিত আলোচনা ও উদ্যোগ গ্রহণে ওআইসি রাষ্ট্র প্রধানগণের এই সম্মেলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

এই সম্মেলনে অ-মুসলিম দেশে মুসলিম সংখ্যালঘুদের সমস্যা তথা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এছাড়া কতিপয় মুসলিম দেশে সংঘাত ও অন্তর্দ্বন্দ্ব বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা যে ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে কিভাবে সেগুলোর সমাধান করা যায়, বিশ্বব্যাপী যে ইসলামোফোবিয়া তৈরী হয়েছে তা দূরীকরনের উপায়, মুসলিম উম্মাহর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা, ওআইসি দেশ গুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্য সহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা এগিয়ে নেয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ক ওআইসি এজেন্ডা প্রভৃতি বিষয় আলোচনায় স্থান পাবে। এছাড়া ও মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং প্যালেস্টাইন ও আলকুদস বিষয়ে প্যালেস্টাইনীদের ন্যায়সঙ্গত দাবী ও অধিকারের বিষয় আলোচনায় বরাবরের মতই গুরুত্ব পাবে।

          জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সুদূর প্রসারী পররাষ্ট্রনীতি ও প্রজ্ঞায় মুসলিম বিশ্বের সাথে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন ও উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে জাতির জনকের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি-র দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর অংশ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইসলামি সহযোগিতা সংস্থায় সদস্য পদলাভ করে। ফলতঃ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করে। সদস্য পদ লাভের পর থেকেই বাংলাদেশ সংস্থাটিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। সকল উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ গ্রহণের সাথে সাথে আল-কুদস রোহিঙ্গা, দক্ষিণ ফিলিপাইন, ইউরোপে মুসলিম সংখ্যালঘু ইত্যাদি বিষয়ক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ওআইসি কনটাক্ট গ্রুপ-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ অবদান রেখে চলেছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ গত বছর ওআইসির ৪৫তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করে। সি.এফ.এমটির প্রায় একবছর কাল সভাপতিত্ব সম্পন্ন করে এবং ওআইসির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। যা ওআইসিতে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের নেতৃত্বের পরিচায়ক।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গৃহীত ‘রূপকল্প-২০২১’ এর মাধ্যমে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ‘রূপকল্প-২০৪১’ এর মাধ্যমে একটি উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিঘাতের মোকাবিলায় বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিশ্বশান্তি রক্ষায় অংশগ্রহণ,  সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সফলতায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে প্রভূত প্রশংসা অর্জন করেছে। এছাড়াও, বাংলাদেশে অবস্থিত ওআইসি-র সহায়ক প্রতিষ্ঠান ইসলামী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলায় বাংলাদেশ সচেষ্ট রয়েছে। পাশাপাশি ওআইসি আন্ত:বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সবুজ ও নীল অর্থনীতির উন্নয়ন, মুসলিম উম্মাহর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে মধ্য পন্থার চর্চা ইত্যাদিতে ওআইসি-র প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সমূহে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার এই চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা ও ভাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশ সমূহের সাথে তাশেয়ার করা গুরুত্ববহ।

২০১৯ সালের ওআইসি শীর্ষ সম্মেলন অনেক গুলো নাটকীয় ঘটনার মধ্যে দিয়ে পরিভ্রমণ করে শেষ পর্যন্ত সৌদিআরবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, প্রথমে এই শীর্ষসম্মেলন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়াতে অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিলো। গাম্বিয়া ২০১৯ সালের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে সরে আসে এবং এর পরবর্তী (অর্থাৎ পঞ্চদশ ওআইসি শীর্ষ সম্মেলন) অনুষ্ঠানের জন্য পুনরায় প্রস্তাবনা পেশ করে। অন্যদিকে- ইতোমধ্যে চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে ২৮-৩০ মে ২০১৯ তারিখে রোহিঙ্গা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের এডহক বৈঠক গাম্বিয়ার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই শীর্ষ সম্মেলন থেকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত – তথা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে (আইসিজে) মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মামলা করার প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নেয়া যাবে বলে আশা করা যায়।

সমস্ত ঘটনা প্রবাহ এবং আনুষঙ্গিক সম্ভাবনা-সম্ভার (পসিবিলিটিফ্রন্টিয়ার) পর্যালোচনা করে এটি প্রতীয়মান হয় যে আসন্ন চতুর্দশ ওআইসি শীর্ষ সম্মেলন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহে এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হবার সব গুলো গুণাবলী অর্জন করতে চলেছে। তুরস্ক থেকে ওআইসির সামিট নের্তৃত্ব সৌদি আরবের হাতে যাবে। এই সম্মেলন মুসলিম বিশ্বে বিরল প্রশংসার অধিকারী একমাত্র নারী সরকার প্রধান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি এবং ওআইসি-তে এশিয়া গ্রুপের পক্ষ থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্য ওআইসি সহ পুরো মুসলিম বিশ্ব গভীর আগ্রহ এবং অনুসন্ধিৎসা নিয়ে অবলোকন এবং পর্যালোচনা করবে বলে আশা করা যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মেলনের সাইড লাইনে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সাথে দ্বিপাক্ষিক সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সে সাথে আমারও কজন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের আয়োজন চলছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাপান সফর শেষ করেই আগামী ৩১ মে ২০১৯ তারিখে পবিত্র মক্কানগরীর উদ্দেশ্যে টোকিও থেকে যাত্রা শুরু করবেন।

          আমরা বিশ্বাস করি এই সম্মেলনে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগ, অভিজ্ঞতা ও অর্জন গুলো মুসলিম বিশ্ব সহ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া এর মাধ্যমে শুধু ওআইসিতেই নয়, বিশ্বে ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনির্মাণ, স্বার্থ সংরক্ষণ ও বিশ্বপরিমন্ডলে স্বীয় কূটনৈতিক অবস্থানকে আরো সুসংহত করা সম্ভব হবে। অধিকন্তু, মুসলিম বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পাবে, দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক ও সুদূর প্রসারী ফল বয়ে আনবে।

ধন্যবাদ।

2019-05-26
Download