ম্যানচেষ্টার, ২৭ মার্চ ২০২৩:
বাংলাদেশ সহকারী হাই-কমিশন, ম্যানচেষ্টারে যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং উৎসবমুখর পরিবেশে ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’-এর গৌরবোজ্জ্বল ৫২ বছরপূর্তি উদ্যাপিত হয়। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানকে মূলত চারটি পর্বে সাজানো হয়েছিল।
প্রথম পর্ব: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২-তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে গত ২১ মার্চ ২০২৩ তারিখ ম্যানচেষ্টারস্থ সেলফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘বাংলাদেশ উদ্যাপন’ [CELEBRATE BANGLADESH] আয়োজন করা হয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সেলফোর্ড শহরের মেয়র, অন্যান্য শহরের উপ-মেয়র, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, শিক্ষাবিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সহকারী হাই-কমিশনার কাজী জিয়াউল হাসান দ্বিতীয়বারের মতো সেলফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ উদ্যাপনের’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন করেন। সহকারী হাই-কমিশনার অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি স্বাধীনতার ৫২-তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
চ্যান্সারী ভবনে আয়োজিত দ্বিতীয় পর্বে ২৬ মার্চ ২০২৩ তারিখে সকাল ১০.০০ ঘটিকায় সহকারী হাই-কমিশনার জাতীয় পতাকা উত্তোলণ করেন। এরপর ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণীসমূহ পাঠ করাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়।
‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’ উদ্যাপনের তৃতীয় পর্বে ২৬ মার্চ ২০২৩ তারিখে সন্ধ্যায় ম্যানচেষ্টার, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলস থেকে বাংলাদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিট্রিশ কাউন্সিলরবৃন্দ, কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন শ্রেণীর বিপুল সংখ্যাক বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণে সহকারী হাই-কমিশনের চ্যান্সারীতে ‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’ উদ্যাপন করা হয়। এ পর্বের অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে আগত অতিথিবৃন্দ-কে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ইফতার এবং নৈশভোজে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
চতুর্থ পর্বে বাংলাদেশ সহকারী হাই-কমিশন, ম্যানচেষ্টার ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস’ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে ম্যানচেস্টারস্থ ‘ম্যানচেষ্টার পিকাডিল্লী হোটেলে’ ম্যানচেষ্টারে বৃটেনের রাজার প্রতিনিধি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, কনসাল জেনারেলসহ অংশগ্রহণকারী কূটনীতিকবৃন্দদের উপস্থিতিতে ক‚টনৈতিক রিসিপশনের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ম্যানচেষ্টারস্থ রাজার প্রতিনিধি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও মেয়রদের উপস্থিতিতে টোস্টিং এবং কেক কাটার মধ্য দিয়ে জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। অনুষ্ঠানে ম্যানচেষ্টারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, মেয়র, কাউন্সিলর এবং কনসাল জেনারেলসহ অংশগ্রহণকারী কূটনীতিকবৃন্দ বিজয়ের ৫২-তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অতঃপর বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ইফতার এবং নৈশভোজের মাধ্যমে আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে ৭১-এ গণহত্যা, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের ঝুঁকি নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী নাটক মঞ্চস্থ হয় যার মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিদেশী অতিথিসহ সকলের গভীর মনযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এছাড়া, বৃটিশ বাংলাদেশী তরুণদের সাথে বাংলাদেশের সংযোগ দৃঢ় করার প্রয়াসের অংশ হিসেবে সহকারী হাই-কমিশনার কাজী জিয়াউল হাসান ক্রীড়া, তারুণ্য এবং সমাজ সেবায় অনবদ্য ভ‚মিকা পালনকারী তিনজন স্বনামধন্য তরুণ বৃটিশ বাংলাদেশী যথাক্রমে জনাব ইমরানুর রহমান, জনাব আক্কি রহমান এবং জনাব হুমায়ুন ইসলাম-কে সম্মাননা প্রদান করেন।
স্বাগত বক্তব্যে সহকারী হাই-কমিশনার কাজী জিয়াউল হাসান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়, বিশ্বমানচিত্রে জম্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। জাতির পিতার স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন ও ১৯৭১ এ সেই স্বাধীনতা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতার ৫২-তম বার্ষিকীতে বাঙ্গালীর অবিসংবাদিত নেতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, জনগণের জীবন মান বৃদ্ধি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আজ অত্যন্ত সম্মানের। তিনি উন্নয়নের সোপনে দ্রুত অগ্রসরমান বাংলাদেশের সোনার বাংলা রূপায়ণে সকলের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা কামনা করেন।