হ্যানয়, ভিয়েতনাম ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩:
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ বাংলাদেশ দূতাবাস, হ্যানয়, ভিয়েতনামে যথাযোগ্য মর্যাদায়, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রদূত কর্তৃক জাতীয় সংগীত সহকারে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিতকরণ, ১ মিনিট নিরবতা পালন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, দোয়া ও মোনাজাত, আলোচনা অনুষ্ঠান এবং ডকুমেন্টারী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ।
ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজ সামিনা নাজ প্রত্যুষে জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন ও অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচীর সূচনা করেন। ভিয়েতনামে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীগণ এবং ভিয়েতনামের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিবৃন্দ, মিডিয়া ব্যক্তিত ও দূতাবাসের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ ও তাদের পরিবারবর্গ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে মান্যবর রাষ্ট্রদূত সমবেত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন । বক্তব্যের শুরুতে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানান। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম যা বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ বাঙ্গালীর স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বকীয়তার ভিত্তিতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আমরা অর্জন করি। তিনি ভাষা শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও সকল ভাষা সৈনিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বদানকারী ও এ কারণে তাঁর কারাবরণের কথা বিনম্র চিত্তে স্মরণ করেন। ইউনেস্কো কর্তৃক মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালনের জন্য মাননীয় প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার করোনা মহামারীরর মধ্যেও এখন ৬.৯৪ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলার। আজকের এই মহান দিনে নিজ ভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে প্রবাসে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমে বহির্বিশে^ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে অব্যাহতভাবে কাজ করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহবান জানান। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির নিমিত্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গ্রহীত রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সকলকে এক সাথে কাজ করার আহ্বান জানান। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তাঁদের মূল্যবান অবদান রাখার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে তাঁদের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রেরণ পূর্বক সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা গ্রহন করার জন্যও অনুরোধ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
অতিথিদের মধ্যে ভিয়েতনাম বিজনেস এসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মিঃ চং দো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মরণে তার নিজ ভাষায় বক্তব্য প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। বাংলাদশে-ভিয়েতনাম বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভূমিকায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম বাণিজ্য ১.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে য ৫ বছর পূর্বেও ছিল ৬০০ মিলিয়ন ডলার।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও ভাষা শহীদদের উপর নির্মিত ১টি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন এবং অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে বাংলাদেশী খাবার আপ্যায়নের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয় ।