স্টকহোম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯: যথাযথ মর্যাদা, গুরুত্ব ও ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে স্টকহোমস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে উদ্যাপিত হল ‘মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অংশগ্রহণ করেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে বাণী পাঠ ও উপস্থিত সকলের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অপরাহ্নে দূতাবাস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী সমূহ পাঠ করা হয়। ভাষা শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে আগত অতিথিবৃন্দসহ মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব মোঃ নাজমুল ইসলাম প্রতীকী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকল শহিদ ও গতকাল ঢাকায় অগ্নিকান্ডে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট ও চেতনা তুলে ধরে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে দিনের প্রথম প্রহরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অর্ধনমিত রাখা হয়।
অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে মহান শহিদ দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, ভাষার জন্য বাঙ্গালিদের জীবন বিসর্জনের অনন্য দৃষ্টান্ত ও আন্তর্জাতিক পরিসরে দিবসটির স্বীকৃতির বিষয়ে আলোকপাত হয়। বক্তাগণের আলোচনায় বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতা অর্জনে অমর একুশের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের দিকসমূহ তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত জনাব মোঃ নাজমুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বাংলা ভাষার প্রতি ভাষাশহিদদের গভীর মমত্ববোধের কথা তুলে ধরে বলেন এ ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য চরম আত্নত্যাগ তাঁদেরকে মহিমানিত করেছে। রাষ্ট্রদূত জনাব ইসলাম ভাষা আন্দোলনে এবং ভাষাভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন জাতিসংঘে তাঁর বাংলায় ভাষণের মাধ্যমেই বিশ্ব দরবারে বাংলাভাষা আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বাংলাভাষার উৎকর্ষ সাধনে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন আর তাঁরই জোরালো প্রচেষ্ঠার ফলে ইউনেস্কো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবেসের স্বীকৃতি অর্জন করে যার ফলে আজ বিশ্বের সকল জাতিগোষ্ঠি এ দিবসটি পালন করছে। মান্যবর রাষ্ট্রদূত এক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বাংলাভাষা রক্ষা ও বিকাশে ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে তাঁদের সন্তানদেরকে অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলাভাষা শিক্ষা ও চর্চা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন।
এরপর প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পী, কলা-কুশলী ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এবারের অনুষ্ঠানে নিয়মিত শিল্পীদের পাশাপাশি উল্লেখসংখ্যক শিশু অংশগ্রহণ করে একুশের উপর ছড়া পাঠ, কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করে। অনুষ্ঠান শেষে মান্যবর রাষ্ট্রদূত শিল্পী ও কলা-কুশলীবৃন্দকে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করেন। নৈশভোজ পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।