সিউল, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩:
বাংলাদেশ দূতাবাস, সিউল আজ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ‘মহান শহিদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে।
এ উপলক্ষ্যে দূতাবাস বিকেলে ইউনেস্কো সম্পর্কিত কোরিয়ান জাতীয় কমিশনের সাথে যৌথভাবে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে ইউনেস্কো সম্পর্কিত কোরিয়ান জাতীয় কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ ও বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনৈতিকবৃন্দ, কোরিয়ার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব দেলওয়ার হোসেন প্রারম্ভিক বক্তব্য এবং ইউনেস্কো সম্পর্কিত কোরিয়ান জাতীয় কমিশনের মহাসচিব ড. কিয়ুং কু হান স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। রাষ্ট্রদূত জনাব দেলওয়ার হোসেন তাঁর প্রারম্ভিক বক্তব্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এছাড়া তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাঙ্গালি জাতিকে চিরকাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। রাষ্ট্রদূত জনাব দেলওয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি ও তাৎপর্য আলোচনাপূর্বক মাতৃভাষা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়নে বর্তমান সরকারের গৃহীত উদ্যোগসমূহ তুলে ধরেন। ইউনেস্কো সম্পর্কিত কোরিয়ান জাতীয় কমিশনের মহাসচিব ড. কিয়ুং কু হান তাঁর স্বাগত বক্তব্যে মাতৃভাষার অস্তিত্ব ও মর্যাদা সংরক্ষণে দুই দেশের সংগ্রামী ইতিহাসের সাদৃশ্য তুলে ধরেন এবং মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
অতঃপর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও সিয়েরা লিওনের রাষ্ট্রদূতগণ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার গিওরমাল-কেওনসাজিওন (Gyeoremal-keunsajeon)-এর সভাপতি মাতৃভাষা ও বহুভাষাবাদ বিকাশে নিজ নিজ দেশের সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগসমূহের উপর আলোকপাত করেন।
আলোচনা পর্ব শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও কলম্বিয়ার শিল্পীরা বর্ণিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের ভাষা ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন।
এ দিন সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রদূত জনাব দেলওয়ার হোসেন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। এরপর ভাষা শহিদদের আত্মার মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সার্বিক মঙ্গল কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয় এবং ভাষা শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অতঃপর দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ এ দিবস উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-এর উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অতঃপর দিবসের পটভূমি ও তাৎপর্য নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এর পূর্বে, একুশের প্রথম প্রহরে, রাষ্ট্রদূত জনাব দেলওয়ার হোসেন দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে আনসান শহরের মাল্টিকালচারাল পার্কে অবস্থিত স্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।