ইসলামাবাদ, ০৮ আগস্ট, ২০২৩ ঃ
ইসলামাবাদস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এঁর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী যথাযথ উৎসাহ উদ্দীপনা এবং তাৎপর্য সহকারে পালন করেছে। এ উপলক্ষে দূতালয় প্রাঙ্গন ব্যানার ও পোস্টারে সজ্জিত করা হয়। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন, বাণীপাঠ, আলোচনাসভা, প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শন, বিশেষ খাবার পরিবেশন ও মোনাজাত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়। ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোঃ আমিনুল ইসলাম খাঁন হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে নিয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর, দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। আলোচনা পর্বে হাইকমিশনের কর্মকর্তাগণ বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবনের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোঃ আমিনুল ইসলাম খাঁন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজির-এঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব শুধু জাতির পিতার সহধর্মিণীই ছিলেন না, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিসংগ্রামের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে প্রতিটি পদক্ষেপে বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। দেশের স্বার্থে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেই কঠিন দিনগুলোতে ছিলেন দৃঢ় ও অবিচল। ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ অবদান রাখেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিতহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রদানের ক্ষেত্রে বঙ্গমাতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদার বাহিনী হাতে গৃহবন্দী অবস্থায় পাকিস্তানে কারাবন্দী বঙ্গবন্ধুর জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বঙ্গমাতা সীমাহীন ধৈর্য্য, সাহস ও বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সাথে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বিশেষ করে মহান মুক্তিযদ্ধে নির্যাতিত মা-বোনদের চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ সামাজিকভাবে তাদের মর্যাদার সাথে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বলেন, দেশ ও জাতির জন্য অপরিসীম ত্যাগ, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, বিচক্ষণতা ও অবদানের জন্য জাতি তাঁকে বঙ্গমাতা উপাধিতে অভিষিক্ত করেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বঙ্গমাতা জীবনে লালন ও ধারণ করে তাঁর সন্তানদের একই আদর্শে গড়ে তোলেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই শিক্ষা, আদর্শ ও চেতনাকে অবলম্বন করে বাংলাদেশকে আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গমাতার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীর এ বছরের প্রতিপাদ্য “সংগ্রাম-স্বাধীনতা প্রেরণায় বঙ্গমাতা” যথার্থই তাঁর জীবন ও কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন। একজন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সহধর্মিণী হয়েও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব সবসময় সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। বঙ্গমাতা ছিলেন প্রখর আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন, নির্লোভ, নিরহংকার, দানশীল ও মহানুভবতার প্রতীক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এর কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাথে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবও সপরিবারে স্বাধীনতা ও দেশ বিরোধী অপশক্তির হাতে শাহাদত বরণ করেন।
সবশেষে, ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বলেন, একজন গৃহিনী হয়েও কিভাবে দক্ষ সংগঠক হিসেবে জাতীয় জীবনে অনবদ্য অবদান রাখা যায় বঙ্গমাতা তারই উজ্জ্বল নিদর্শন। তাঁর আদর্শ যুগে যুগে শুধু বাঙালি নারীদের জন্য নয় সকল বাঙ্গালীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
আলোচনা পর্বের পরে, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবনীভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরিশেষে, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্ট শহীদ তাঁর পরিবারের সদস্যের আত্মার মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।