করাচি, ১৫ আগস্ট ২০২২:
বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন করাচি অদ্য সোমবার ১৫ আগস্ট ২০২২ তারিখে বিনম্র শ্রদ্ধা, যথাযথ মর্যাদা ও ভাব-গাম্ভীর্যের সহিত শোক দিবস পালন করে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭ তম শাহাদৎ বার্ষিকীতে পালিত জাতীয় শোক দিবসে করাচিস্থ উপ-হাইকমিশন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করে।
করাচিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার এস.এম. মাহবুবুল আলম বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালনের কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় দূতাবাসে কর্মরত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং তাদের পরিবারবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর সকলের উপস্থিতিতে উপ-হাইকমিশনার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং বিনম্র শ্রদ্ধায় কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপরে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয় শোক দিবসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা এবং অন্যান্য শাহাদৎ বরনকারী সকলের প্রতি বিনম্্র শ্রদ্ধায় এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। জাতীয় শোক দিবসে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণীসমূহ পাঠ করা হয়। অতঃপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর নির্মিত ৩৫ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। দূতালয় প্রধান ও প্রথম সচিব মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এবং উপ-হাইকমিশনার এস.এম. মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে দিবসটির উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
উপ-হাইকমিশনার এস.এম. মাহবুবুল আলম তাঁর বক্তব্যের শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বঙ্গমাতাসহ ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট শাহাদৎ বরণকারী সকলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ত্রিশলক্ষ শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং পরম করুণাময় মহান আল্লাহর দরবারে সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
উপ-হাইকমিশনার এস.এম. মাহবুবুল আলম তাঁর বক্তব্যে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুমহান আদর্শ ও অবদান তুলে ধরে উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালী জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার রূপকার। বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীকার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দেন। মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীকারের প্রশ্নে জাতির নেতা ছিলেন আপোসহীন। ফাঁসির মঞ্চেও বঙ্গবন্ধু বাংলা ও বাঙালীর জয়গান করেছেন। সুগভীর দেশপ্রেম, অসীম সাহসিকতা, অনন্য বাগ্মীতা, দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ভাস্বর জাতির পিতা বাঙালীর আবেগ, স্বপ্ন ও স্বাধীনতার অদম্য আকাঙ্খাকে একসূত্রে গেঁথেছেন, সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য উজ্জ্বীবিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশলক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ ও দু’লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার স্বপ্নের স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জন করে।
উপ-হাইকমিশনার এস.এম. মাহবুবুল আলম উল্লেখ করেন, মহান মুুক্তিযুদ্ধের পর জাতির পিতা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ও অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রের জন্য মহামূল্যবান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য শক্তিশালী কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহন করেন এবং সদ্য স্বাধীনতা লাভের সাড়ে তিন বছর সময়কালে বিশ্বের ১১৬টি দেশের স্বীকৃতি আদায় এবং জাতিসংঘ, ন্যাম, ওআইসিসহ ২৭টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ অর্জনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উপ-হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের স্বাধীনতার প্রতীক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি, আদর্শ, দেশের জন্য সুমহান আত্ম-ত্যাগ, গভীর দেশপ্রেম বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতাকামী মানুষের অধিকার আদায়ে ও শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণজাগরনে সব সময় যেমন অনুপ্রেরণা যোগাবে তেমনি সমগ্র বাঙালির জন্যও প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে এবং নিটল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ-মাতৃকার জন্য নিবেদিতপ্রাণ কাজ করার শক্তি ও উৎসাহ যোগাবে মর্মে উপ-হাইকমিশনার মন্তব্য করেন।