হংকং, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২:
বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা সহকারে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, হংকং কর্তৃক অদ্য ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২২ ও অভিবাসী সপ্তাহ পালন করা হয়েছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিলঃ ‘‘থাকব ভালো, রাখব ভালো দেশ –বৈধ পথে প্রবাসী আয়, গড়ব বাংলাদেশ”। এ উপলক্ষ্যে দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কনস্যুলেটের সম্মেলন কক্ষে কনসাল (শ্রম) জাহিদুর রহমানের সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও গীতা পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল মিজ ইসরাত আরা, কনস্যুলেটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব হংকং-এর নেতৃবৃন্দ, হংকংস্থ বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বানী পাঠ করা হয়।
কনসাল জেনারেল মিজ্ ইসরাত আরা তাঁর বক্তব্যে হংকংস্থ প্রবাসী বাংলাদেশীসহ সকল অভিবাসীদের আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের শুভেচ্ছা জানান। তিনি অর্থনীতির চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি জানান, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসী কর্মীদের মর্যাদা ও অধিকার অক্ষুন্ন রাখা এবং তাদের অবদানে দেশের অর্থনীতির ভূমিকা এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অভিবাসী দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের সঠিক পদক্ষেপ ও ব্যবস্থাপনায় দেশের জনসংখ্যা আজ জনসম্পদে রূপ নিয়েছে। আজ বিশ্বের ১৭৪ টি দেশে ১ কোটি ৪০ লক্ষের বেশি বাংলাদেশী সুনামের সাথে কাজ করছে। তিনি হংকং প্রবাসী বাংলাদশীসহ সব অভিবাসীকে দেশের উন্নয়নে ও সুনাম বৃদ্ধিতে আরো বেশি দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞপন করেন।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে আলোচনা সভা শেষে বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রেরণের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী তিনজনকে প্রথমবারের মতো সম্মাননা ও রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। প্রথমবারের মতো সম্মাননা ও রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড প্রদান করায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা কনসাল জেনারেল ও কনস্যুলেটকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান। পরিশেষে, কনসাল জেনারেল অভিবাসীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং অভিবাসী সপ্তাহের সফলতা কামনা করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এর আগে সকালে হংকং এর একটি পার্কে এখানে কর্মরত প্রায় দুই শতাধিক বাংলাদেশী নারীকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। দিনটি তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন, রবিবার হওয়ায় বাংলাদেশী নারীকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের নারী কর্মীরা সুনামের সাথে হংকংয়ে কাজ করে, বৈধ উপায়ে কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করায় কনসাল জেনারেল মহোদয় ও কনসাল (শ্রম) তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স প্রেরণকে উৎসাহিত করতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে বৈধ উপায়ে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী তিনজন নারীকর্মীকে সম্মাননা ও রেমিট্যান্স এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নারীকর্মীরাও তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। তাদের হংকং-এ আসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য তারা সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নারী কর্মীদের সবসময় সকল সহযোগিতা প্রদান, এমনকি প্রতিমাসের শেষ রবিবার তাদের জন্য অফিস খোলা রাখায় কনস্যুলেটকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রথমবারের মতো সম্মাননা ও রেমিট্যান্স এ্যওয়ার্ড প্রদানের বিষয়টিকে কর্মীগণ সাধুবাদ জানান ও এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ জানান। অনুষ্ঠানে নারীকর্মীদের আপ্যায়ন এবং চিত্তবিনোদন ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, হংকং-এ প্রায় ৮০০ জন নারীকর্মী কাজ করছেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিগত প্রায় ৩ বছরে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ থাকলেও বর্তমানে হংকং-এ নারীকর্মীর আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিমাসে থাকা খাওয়ার খরচ বাদে ন্যুনতম প্রায় ৫০,০০০/-টাকা তারা আয় করেন। হংকং, বাংলাদেশের নারীকর্মীদের জন্য আদর্শ জায়গা এবং বিদ্যমান শ্রম আইন দ্বারা কর্মীদের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা করা হয় বিধায় এজেন্সির মাধ্যমে বয়স্ক মানুষের সেবার জন্য কেয়ারগিভার সহ আরো বেশি দক্ষ কর্মী হংকংয়ে আনার বিষয়ে কনস্যুলেট কাজ করে যাচ্ছে।