ভিয়েতনাম ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ঃ
ভিয়েতনামের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভিয়েতনাম ইউনিয়ন অব ফ্রেন্ডশীপ অর্গানাইজেশন (VUFO)-এর প্রেসিডেন্ট ম্যাডাম নূয়্যেন ফুওং ন্যা (Nguyen Phuon Nga)-এর সাথে ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মিজ সামিনা নাজ ২৯ আগস্ট ২০২৩ এক বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন।
উভয়ের মধ্যে উষ্ণ অর্ভ্যথনা বিনিময় শেষে রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বলেন, শুধুমাত্র ভিয়েতনামের ক‚টনৈতিক জীবন না বরং জনগনের সাথে জনগনের যোগাযোগ, জনগনকে একে অপরের সান্যিধ্যে আনা, বিশেষত যখন কূটনীতির ধারণা পরিবর্তিত হয়ে জনগনের সাথে জনগনের সংযোগের উপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে সে সময়ে ভিয়েতনাম ইউনিয়ন অব ফ্রেন্ডশীপ অর্গনাইজেনশন (VUFO) এবং এর প্রেসিডেন্টের ভুমিকা প্রশংসনীয়। মান্যবর রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যেকার গভীর ঐতিহাসিক বন্ধন উল্লেখ করে দেশটির উন্নয়নের প্রশংসা করেন। উভয় দেশের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট হো চি মিন সবসময় দেশের জনগনের চিন্তা করেছেন এবং মুক্ত, স্বাধীন এবং সুখী সমৃদ্ধ দেশের জন্য তাদের সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন।
মান্যবর রাষ্ট্রদূতের জবাবে ম্যাডাম নূয়্যেন ফুওং ন্যা (Nguyen Phuon Nga) বলেন যে, বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং সহযোগীতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যেকার ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি উদাহরন। ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে একে অপরের থেকে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে। বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে সহযোগীতা এবং সম্পর্ক গভীরতর করার জন্য ভিয়েতনাম চেষ্টা করবে। উপ-পররাষ্টমন্ত্রী/(VUFO)-প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন যে, স্বল্প জনবল নিয়ে কূটনৈতিক কার্যক্রম কিভাবে চালানো যায় তা রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজের কাছে থেকে শেখার জন্য তিনি সবসময় ভিয়েতনাম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং (VUFO)-এর কর্মকর্তাগণকে উপদেশ দেন। রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ যেভাবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের অর্জনসমূহকে তুলে ধরেন, তার প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বলেন যে, দীর্ঘ ০৬ বছর ধরে ভিয়েতনামে দায়িত্ব পালনকালে, তিনি গভীরভাবে অনুধাবন করেন যে, ভিয়েতনামে কূটনীতিকদের কূটনৈতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি ভিয়েতনামের সামাজিক কর্মকান্ডেরও অংশীদার হওয়া যায়। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় রাষ্ট্রদূত ভিয়েতনামের জনগনের কল্যাণে ভিয়েতনামের হাসাপাতালগুলোতে রক্তের অভাব বুঝতে পেরে মহামারী চলাকালীন সময়ে ৩ বার দূতাবাসের স্টাফদের সাথে তিনি নিজেই স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন এবং ভিয়েতনামের বন্ধু এবং বাংলাদেশীদের সহ অন্যান্য ব্যক্তিদেরও রক্তদানের জন্য অনুপ্রাণিত করেন এবং সেই সাথে অসহায় লোকদের খাদ্যদ্রব্য প্রদান করেন এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, হুইল চেয়ার প্রদান করেন।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন যে, দু’দেশের মধ্যেকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌছানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামকে একত্রে কাজ করতে হবে। সকল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে চমৎকার সহযোগীতার সম্পর্ক বিদ্যমান এবং সবসময় একে অপরের সমর্থনে পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের রোহিঙ্গা ইস্যুতে রেজুলেশন পাসের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রদানে ভিয়েতনামের সমর্থনের প্রশংসা করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম (এআারএফ)-এর একটি সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে ইচ্ছুক এবং এ বিষয়ে ভিয়েতনামের সমর্থন প্রত্যাশী।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত (VUFO)-এর প্রেসিডেন্টকে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি গঠন করার ব্যাপারে ভিয়েতনাম নেতৃবৃন্দের কাছে একটি ধারনা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন যার ফলে দু’দেশের জনগন একে অপরের আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ পাবে সে সাথে অর্থনৈতিক কূটনীতি, বৌদ্ধ পর্যটন, ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। ম্যাডাম নূয়্যেন ফুওং ন্যা সম্মত হন যে, এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন দু’দেশের জনগনকে আরও কাছাকাছি আনবে এবং পরস্পরের মধ্যে সহযোগীতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে এবং এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীবৃন্দ বাংলাদেশ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য তিনি কাজ করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
সাক্ষাৎ শেষে উভয়ের মধ্যে স্যুভেনির বিনিময় হয় এবং উভয়ের সুস্বাস্থ্য, সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন এবং ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করা হয়।
এ প্রসঙ্গে দৈনিক ভিয়েতনাম টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির লিংক নিম্নে দেওয়া হলো-