আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান ভাষা শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়। দূতাবাস ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দূতাবাসে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জনতা ব্যাংক লি., বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ স্কুল, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার স্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের সূচনায় আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর, মান্যবর রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক স্থাপন করা হয়। উপস্থিত বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা এবং ব্যক্তিবর্গ অতঃপর তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরবর্তীতে, পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও ভাষা শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ কর্তৃক উক্ত দিবসে প্রদত্ত বাণীসমূহ পাঠ ছিলো অনুষ্ঠানের পরবর্তী আয়োজন।
অতিথি বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে এই দিবসের প্রতিপাদ্য তুলে ধরেন। তারা বলেন, বাঙালি জাতির জন্য এই দিনটি চরম শোক ও বেদনার। অনদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। এ জাতির জন্য সবচেয়ে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার হচ্ছে নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার যা ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদরা জাতিকে উপহার দিয়ে গেছেন। আলোচকগণ তাদের আলোচনায় মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভে ভাষা শহিদদের চূড়ান্ত আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং মাতৃভাষার মর্যাদা ও সম্মানকে সমুন্নত রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে মান্যবর রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষার অধিকার যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে আমরা চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করি যার পুরোধা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষা “বাংলা”-এর মর্যাদা রক্ষায় যে সকল ভাষা শহিদ প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনা ও নেতৃত্বে এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ-সংস্থা ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ফলে সমগ্র বিশ্বে এখন দিবসটি প্রতিপালিত হচ্ছে। মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রবাসী প্রজন্মকে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশী ভাইবোনদের প্রতি আহবান জানান।
পরিশেষে, ভাষা শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয় এবং প্রার্থনা শেষে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।