ইসলামাবাদ, ১৭ মার্চ, ২০২৩ ঃ
ইসলামাবাদস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনা ও জাকজমকভাবে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে উদযাপন করেছে। হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারবর্গ এবং শিশু-কিশোররা এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এ উপলক্ষে দূতালয় প্রাঙ্গন বর্ণাঢ্য ব্যানার, পোস্টার, রঙ্গীন ফুল ও বেলুনে সুসজ্জিত করা হয়।
অনুষ্ঠানের সকালের পর্বে হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর হাইকমিশনার মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী দূতালয় প্রাঙ্গনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সূচনা করেন। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা পর্ব শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
হাইকমিশনার তাঁর বক্তব্যে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু শৈশব থেকেই ছিলেন নির্ভীক, দয়ালু এবং পরোপকারী কিন্তু অধিকার আদায়ে ছিলেন আপোসহীন। নিজের স্কুলের সমস্যা সমাধানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বন্ধুকে ছাতা দিয়ে নিজে বাড়ি ফিরেছেন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে। শীতকালে গায়ের চাদর খুলে দিয়েছেন বৃদ্ধকে। বেড়ে উঠেছেন মানবিক গুনাবলী নিয়ে। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে অন্যায়-অবিচার ও শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কখনো শাসকগোষ্ঠীর সাথে আপোস করেননি। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালি জাতিরই নয়, তিনি ছিলেন বিশ্বের সকল নিপীড়িত-শোষিত মানুষের অধিকার ও মুক্তির অগ্রনায়ক।
হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের টানে ১৯৬৩ সালে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে ‘কচিকাঁচার মেলা’ আয়োজিত শিশু আনন্দ মেলায় গিয়েছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “এই পবিত্র শিশুদের সঙ্গে মিশি মনটা একটু হালকা করার জন্য এলাম”। ছোট্ট এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শিশুদের প্রতি তার আন্তরিক ভালোবাসা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছিল। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ ঘোষণা করে।
হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এবং ভবিষ্যতে দেশ গড়ার কাজে তারাই নেতৃত্ব দেবে। একটি শিক্ষিত জাতি সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন এবং ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। বঙ্গবন্ধু শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ২২ জুন শিশু আইন প্রণয়ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু ঘোষিত শিশু নীতিকে আরো যুগোপযোগী করতে শিশু আইন ২০১৩ প্রণয়ন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের একটি শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে স্কুলগামী শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে আনয়ন, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি শিশুদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌছে দেওয়া, মেয়েদের বিনাবেতনে অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সকল শ্রেণির মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের নিজস¦ একাউন্টে শিক্ষা সহায়তা বৃত্তি প্রদানসহ শিশুদের স্বাস্থ্য, বিনোদন ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। হাইকমিশনার আরও বলেন, জাতির পিতার অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখি-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মানের লক্ষ্যে শিশুদের গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে আইটি নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনসহ শ্রেণিকক্ষসমূহে মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করেছে।
হাইকমিশনার আজকের এই বিশেষ দিনে সকল শিশুদের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে এবং জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে সকলকে আহ্বান জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। আলোচনা পর্ব শেষে জাতির পিতার আত্মার মাগফেরাত এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিকালের অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার সকল শিশু-কিশোরদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ইভেন্টে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর হাইকমিশনার শিশুদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটেন।
বঙ্গবন্ধু’র জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে “মুজিবের বাংলাদেশ” বিষয়ে রচনা এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বিষয়ে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় ছিল ভিন্ন ভাষাভাষি নয় জন শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধু’র “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” থেকে বাংলা, উর্দু ও ইংরেজিতে ‘পাঠ চক্র’। পাঠ চক্র শেষে বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এবং পাঠ চক্রে অংশগ্রহণকারীসহ সকল শিশু-কিশোরদের মাঝে আকর্ষণীয় পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এরপর শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষে শিশুদের পছন্দের খাবার সহযোগে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।