জেনেভা, ২০ আগস্ট ২০২০:
‘উন্নয়ন, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় একটি দায়িত্বশীল, কার্যকর ও অবদানক্ষম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আগামী দিনগুলোতেও জাতিসংঘের সাথে তার সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখবে।’ জেনেভাস্থ জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ শামীম আহসান আজ সকালে জেনেভাস্থ জাতিসংঘ কার্যালয়ের মহাপরিচালক তাতিয়ানা ভালোভায়া-এর সাথে বিদায়ী সাক্ষাতকালে একথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক ঈর্ষণীয় হার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতির বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি তাঁর সময়কালে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে গৃহীত রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কিত কয়েকটি ফলপ্রসূ উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গা সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে জাতিসংঘকে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানান। জেনেভাস্থ নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক সম্মেলনের বর্তমান সভাপতি হিসেবে তাঁকে সক্রিয় সহযোগিতা প্রদান করার জন্যও রাষ্ট্রদূত সম্মেলনটির মহাসচিব ভালোভায়া-কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
রাষ্ট্রদূত আহসান কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতিসংঘের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি কোভিড-১৯-কে উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করে চলমান মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে অধিকতর সহায়তা প্রদানের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানান। এছাড়া, তিনি জলবায়ু পুরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা ও প্যারিস চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন, নিয়মিত অভিবাসীদের পাশাপাশি অনিয়মিত অভিবাসীদের মানবাধিকার সংরক্ষণ ও অভিবাসন সংক্রান্ত বৈশ্বিক চুক্তির বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে জাতিসংঘকে সদস্য দেশগুলোর সাথে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করতে পরামর্শ দেন।
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘এই বছরটি জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একদিকে জাতিসংঘের ৭৫ বছর পূর্তি এবং অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী।’ এই বিশেষ মাহেন্দ্রক্ষণ উপলক্ষে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মহাপরিচালক ভালোভায়া-এর হাতে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র একটি অনুলিপি তুলে দেন। এছাড়া, তিনি বইটির ইংরেজি, আরবি, রুশ, চীনা, স্প্যানিশ ও ফরাসি সংস্করণের অনুলিপিগুলো জেনেভাস্থ জাতিসংঘ কার্যালয়ের পাঠাগারকে উপহার হিসেবে প্রদান করেন।
মহাপরিচালক ভালোভায়া বিদায়ী স্থায়ী প্রতিনিধিকে সফলভাবে তাঁর মেয়াদ সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এই সময়ে জেনেভা থেকে আপনার বিদায় আমাদের জন্য একটি বিশাল ও ব্যক্তিগত ক্ষতি’। তিনি চলমান নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক সম্মেলনে সফল সভাপতিত্বের জন্যও রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান। মহাপরিচালক বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় পরিবেশ-বান্ধব অর্থনীতি গড়ে তোলার উপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া, তিনি কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার উপর জোর দেন। তিনি বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের অবসর পরবর্তী জীবনের সুস্থতা, দীর্ঘায়ু ও সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন।
পরিশেষে রাষ্ট্রদূত আহসান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করার জন্য মহাপরিচালক ভালোভায়া ও তাঁর কার্যালয়ের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জেনেভাস্থ জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রায় ছয় বছর দায়িত্ব পালন করে রাষ্ট্রদূত আহসান তাঁর সুদীর্ঘ ৩৫ বছরের কূটনৈতিক কর্মজীবন শেষে বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন।