মানামা, বাহরাইন, ১৩ আগস্ট ২০২৩:
বাংলাদেশ দূতাবাস, বাহরাইনে গত ১১ আগস্ট ২০২৩ তারিখে আনন্দমুখর পরিবেশে দূতাবাসের সহযোগিতায় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর-এর আয়োজনে, ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করা হয়। মান্যবর রাষ্ট্রদূত ড. মো: নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব ফয়সল আহমেদ, যুগ্ম সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেঃ কর্নেল সৈয়দ মোঃ তৌফিকুল ইসলাম, উপ-প্রকল্প পরিচালক, ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।
কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান এ. কে. এম. মহিউদ্দিন কায়েসের সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও শোকের মাস আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির শুভ সূচনা করা হয়। উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক, উপ-পরিচালক, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, বাহরাইনে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দসহ দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে জনাব মোঃ ইলিয়াসুর রহমান, কাউন্সেলর (পাসপোর্ট ও ভিসা) উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে ই-পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুজিবর্ষের প্রথম উপহার হিসেবে বাংলাদেশি নাগরিকদের হাতে ই-পাসপোর্ট ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারী তুলে দেন যার ধারাবাহিকতায় বাহরাইনে আমরা ই-পাসপোর্ট পরিষেবা পেতে যাচ্ছি। তিনি দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এবং Facebook পেইজে শিঘ্রই ই-পাসপোর্ট পরিষেবা প্রাপ্তির নিয়মাবলী উল্লেখ করা বলে জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে লেঃ কর্নেল সৈয়দ মোঃ তৌফিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত কারিগরী বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ই-পাসপোর্ট হলো একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট যাতে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ রয়েছে। ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপের মধ্যে রয়েছে বায়োমেট্রিক তথ্য যা পাসপোর্টধারীর পরিচয় প্রমাণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে সর্বাধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট সম্পর্কিত সম্যক ধারণা দেয়ার জন্য তিনি একটি ভিডিও ক্লিপ স্ক্রিনে প্রদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জনাব ফয়সল আহমেদ তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনস্থ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর কর্তৃক চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে ৭২ টি পাসপোর্ট অফিস এবং বিদেশে এখন পর্যন্ত ৩০টি স্থান হতে ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বেনাপোল স্থলবন্দরে ই-গেইট স্থাপন করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের সার্বিক সাফল্য ও উপস্থিত সকলের মঙ্গল কামনা করে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, দূতাবাসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হওয়ার মাধ্যমে বাহরাইন প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে ই-পাসপোর্টের নানাবিধ সূবিধাসমূহ তুলে ধরেন। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করার দিক থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস, বাহরাইন ৩০তম বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন হিসেবে এর শুভযাত্রা শুরু করলো। আরো ৫০টি বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে ই-পাসপোর্ট সেবা খুব তাড়াতাড়ি চালু করা হবে। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, তাঁর নেতৃত্বে দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যের শেষে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদেরকে দলমতের বিভেদ ভুলে একযোগে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ’ তথা প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আওতায় ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পক্ষ হতে মান্যবর রাষ্ট্রদূত ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলামকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ই-পাসপোর্ট সেবা প্রত্যাশী ৪ জনকে এনরোলমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদের হাতে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান অতিথি কর্তৃক ডেলিভারি স্লিপ হস্থান্তর করা হয়।
পরিশেষে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টে তাঁর পরিবারের সকল শহীদগণের এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং ই-পাসপোর্টের সাফল্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।