প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আসসালামু আলাইকুম।
৮ এপ্রিল ২০২১ তারিখে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি।
২। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে ডি-৮ এর সভাপতিত্ব লাভ করেন। উক্ত সম্মেলনে ডি-৮ এর বিদায়ী চেয়ার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট H.E. Mr. Recep Tayyip Erdogan, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট ডি-৮ এর Chairmanship হস্তান্তর করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এবং বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব প্রদান করেন। এছাড়াও, অন্যান্য ডি-৮ রাষ্ট্র/সরকারপ্রধানগণও ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিতব্য উক্ত শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। দশম শীর্ষ সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আগামী দুই বছর ডি-৮ এর Chair-এর দায়িত্ব পালন করবে।
৩। উল্লেখ্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন এবং ইতোপূর্বে বাংলাদেশ ১৯৯৯-২০০১ মেয়াদে ডি-৮ এর সভাপতিত্বের দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
৪। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উক্ত শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ হতে বক্তব্য প্রদান করেন। মুজিববর্ষ উদযাপনের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের সুপারিশ লাভ করেছে। এ ঐতিহাসিক মুহূর্তে ডি-৮ এর পরবর্তী দুই বছরের সভাপতিত্ব লাভ করার মাধ্যমে বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান আরো দৃঢ় হবে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
৫। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সংকট হতে উত্তরণের জন্য প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন খাতে কার্যকর এবং বৃহত্তর সহযোগিতার প্রয়োজন। তিনি আরো উল্লেখ করেন, এ সংকটকালীন সময়েও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৫.২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি তাঁর বক্তব্যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজভূমে প্রত্যাবর্তনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য ডি-৮ ভুক্ত দেশসমূহের নিকট আহবান জানান।
৬। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি প্রতিরোধে অভিযোজন এবং প্রশমনের পদক্ষেপসমূহ গ্রহণে কার্যকর সহযোগিতার জন্য ডি-৮ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান এবং Climate Vunerable Forum (CVF)- এর বর্তমান চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ অন্যান্য ডি-৮ সদস্যরাষ্ট্রকে Paris Agreement বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত মর্মে তিনি উল্লেখ করেন।
৭। ডি-৮ এর সহযোগিতার খাতগুলোর মধ্যে বাণিজ্য খাতে সর্বাধিক গুরত্বারোপ করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে “Trade and Investment Cooperation Agreements” স্বাক্ষরের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার জন্য ডি-৮ সচিবালয়কে পরামর্শ প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি বাণিজ্য খাতে বেসরকারি সেক্টরের ভূমিকা উল্লেখ করে বাংলাদেশসহ ছয়টি ডি-৮ দেশ কর্তৃক অনুসমর্থিত "Simplification of Visa Procedures for the Businessmen of the D-8 Member States" দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ জানান।
৮। উক্ত শীর্ষ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট, ইরানের প্রেসিডেন্ট, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, মিশরের প্রধানমন্ত্রী এবং নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী উক্ত শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও, বিশেষ অতিথি হিসেবে OIC-এর সহকারী-সেক্রেটারি জেনারেল, Islamic Development Bank- এর সহ-সভাপতি, D-8 CCI- এর চেয়ার এবং D-8 Youth- এর চেয়ার উক্ত সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন।
৯। দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন এর প্রস্তুতিমূলক সভা হিসেবে গত ৭ এপ্রিল ২০২১ তারিখে ১৯-তম D-8 Council of Ministers এবং গত ৫-৬ এপ্রিল ২০২১ তারিখে 43rd Session of the D-8 Commission ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯-তম D-8 Council of Ministers- সভায় আমি ডি-৮ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করি। উক্ত সভায় তুরস্কের মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মেভলুত চাভুসৌলু এর নিকট হতে আমি ডি-৮ Council of Ministers- এর সতাপতিত্ব লাভ করি । অনুরূপ, 43rd Session of the D-8 Commission সভায় ডি-৮ কমিশনের বিদায়ী চেয়ার, তুরস্কের Ambassador Omer Gucuk, Director General, Multilateral Economic Affairs, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন-কে ডি-৮ কমিশনের Chair-এর পদটি হস্তান্তর করেন।
১০। আরো উল্লেখ্য যে, দশম শীর্ষ সম্মেলনের sideline-এ ৫ এপ্রিল ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত D-8 Business Forum- এ বাংলাদেশের FBCCI, তুরস্কের The Union of Chambers and Commodity Exchange of Turkey (TOBB)-এর নিকট হতে D-8 Chambers of Commerce and Industries (D-8 CCI)-এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছে। D-8 CCI-এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ ডি-৮ দেশসমূহের ভেতরে ব্যবসা ও বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা করছি।
১১। মূলত চতুর্থ শিল্প বিল্পবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং নতুন প্রযুক্তিসমূহ আয়ত্ত করার মাধ্যমে ডি-৮ অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের যুব সম্প্রদায় যাতে তাদের সুপ্ত সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চভাবে বিকশিত করে নিজ নিজ দেশের উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশগহণ করতে পারে সেই প্রত্যাশাকে সামনে রেখে সম্মেলনটির আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবারের শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য “Partnership for a Transformative World: Harnessing the Power of Youth and Technology” নির্ধারণ করেছে। এ প্রত্যাশাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবারের শীর্ষ সম্মেলনের sideline-এ ডি-৮ ভূক্ত দেশসমূহের ১৮০ জন যুব প্রতিনিধিগণের অংশগ্রহণে প্রথমবারের মতো D-8 Youth Summit আয়োজন করে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত উক্ত যুব সম্মেলনে ডি-৮ ভূক্ত দেশসমূহের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীগণ বক্তৃতা প্রদান করেন। এছাড়াও, যুব সম্মেলনটিতে “Enterpreneurship for Sustainable Transformation” শীর্ষক বিষয়ে একটি বক্তব্য প্রদান করা হয়।
১২। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে “Dhaka Declaration 2021” এবং ডি-৮ দেশসমূহের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণীত আগামী দশ বছরের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ “D-8 Decennial Roadmap for 2020-2030” গৃহীত হয়। বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প সহযোগিতা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পরিবহন, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ এবং পর্যটন-এ গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি খাতে আন্তঃ ডি-৮ সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়াদিতে ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সম্মিলিত নীতিগত অবস্থান এবং সে প্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার রূপরেখা উক্ত ডকুমেন্টসমূহে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। উক্ত “ঢাকা ঘোষণা ২০২১” এবং Roadmap-এর আওতাভূক্ত কার্যক্রম শীর্ষ সম্মেলন পরবর্তী বাংলাদেশের দুই বছরের সভাপতিত্বে বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
১৩। আমরা বিশ্বাস করি দশম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন এবং আগামী দুই বছর ডি-৮ এর Chair-এর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনির্মান, স্বার্থ সংরক্ষণ ও বিশ্ব পরিমন্ডলে স্বীয় কূটনৈতিক অবস্থানকে আরো সুসংহত করা সম্ভব হবে।
১৪। উপস্থিত সাংবাদিক বন্ধুগণ,
এই শীর্ষ সম্মেলন সম্প্রচারের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।