Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

Last updated: 11th June 2023
Press Release

ভিয়েতনামে ৫৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন

 

ভিয়েতনাম ০৯ জুন ২০২৩ঃ

 

৫৩তম স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবস-২০২৩ এবং বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম কূটনৈতিক সম্পর্কের সূবর্ণজয়ন্তী বাংলাদেশ দূতাবাস হ্যানয়, ভিয়েতনামে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ উদযাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে হ্যানয়স্থ পাঁচতারকা ডাইউ (Dawoo) হোটেলে উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা, আলোচনা অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শন, ডকুমেন্টরী প্রদর্শন ও নৈশ্যভোজের আয়োজন করা হয়।

 

ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ-এঁর আমন্ত্রণে  হ্যানয়স্থ পাঁচতারকা ডাইউ (Dawoo) হোটেলে এক বিশেষ উদযাপন অনুষ্ঠান, আলোচনা, সংম্বর্ধনা এবং নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভিয়েতনামের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাননীয় ডু হাং ভিয়েত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভিয়েতনামের জাতীয় এসেম্বলীর সদস্য ম্যাডাম লে থু হা।  অনুষ্ঠানে আরও বিশিষ্ট গন্যমান্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন কূটনৈতিক কোর-এর ডীন প্যালেস্টাইন এর রাষ্ট্রদূত সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং কূটনৈতিক কোরের অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ, ভিয়েতনামস্থ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ, ভিয়েতনাম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সরকারী উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাগণ, ভিয়েতনাম বৌদ্ধ সংঘের স্ট্যান্ডিং ভাইস প্রেসিডেন্ট অফ এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল সম্মানিত থিচ থান হিউ, ভিয়েতনামস্থ আল-নুর মসজিদের ইমাম, প্রবাসী বাংলাদেশীগন, ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, মিডিয়া ও অন্যান্য সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দসহ প্রায় ২৫০ জন  অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

 

অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এর পরেই বাংলাদেশের ৫৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথিবৃন্দকে স্বাগত ও উষ্ণ অর্ভ্যথনা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বক্তৃতা শুরু করেন। বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নের্তৃত্বের কথা  তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে আরো স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে অত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। আরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিদেশী বন্ধুসহ যাঁরা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। আমাদের জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সুখী, সমৃদ্ধ ও স্বাধীন ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা তাঁর স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অগ্রগতি ও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন এবং গত ১৪ বছরে টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিনিয়োগ বান্ধব নীতি, বিশাল অভ্যন্তরীন বাজার, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, রাজনৈতিক স্থিতিশৗলতা এবং কঠোর পরিশ্রমী দক্ষ জনগণ বাংলাদেশকে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এই মুহূর্তে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। লন্ডনের সেন্টার ফর ইকোনমিকস এন্ড ব্যাংকিং রিসার্চ অনুসারে, ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘ইকোনমিক বুল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে এবং আমাদের দেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তিনগুন বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে ১,৬৬৪/- মার্কিন ডলার এবং ২০২২ সালে ২,৮২৪/ মার্কিন ডলার যা ২০০৫ সালে ছিল ৫১১/- মার্কিন ডলার। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ বার্ষিক ৬% হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের এ সাফল্যের পিছনের চালিকা শক্তি। জাতীয় দিবস উৎযাপনকালে রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ দু’দেশের মধ্যকার শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য ভিয়েতনামের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ২০২৩ সাল বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। ১৯৭৩ সালে ঢাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামের প্রতিনিধিদল ও কূটনৈতিকদের উপস্থিতিকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন যার পরে ১১ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনেতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর এটি উত্তর ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রামকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিল  এবং উত্তর ভিয়েতনামে বোমা হামালার তীব্র বিরোধিতা করেছিল যা বাংলাদেশে বিক্ষোভের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছিল। রাষ্ট্রদূত, আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভিয়েতনামের মহান নেতা হো-চি-মিন-কে যাঁরা দেশের মানুষকে মুক্ত করার স্বপন্ থেকে সারাজীবন উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, প্রথম পাঁচ দশক বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক বজায় রেখেছে যা ভবিষ্যতে আরো গভীর ও শক্তিশালী করতে হবে। এই জন্য উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, মিঠা পানির মৎস্যসম্পদ, ঔষধ, আইসিটি, জনগনের সঙ্গে মানুষের সংযোগ, সরাসরি বিমান যোগাযোগ, পর্যটন, বৌদ্ধ পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে একসঙ্গে কাজ করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে পারস্পারিক সুবিধার জন্য   সংস্কৃতি ও খেলাধুলা, দুযোর্গক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ব্লু ইকোনমি, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, নারীর ক্ষমতাবয়ন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, পারস্পারিক সহায়তা, বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং আরও অনেক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং দু’দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট এবং কোভিড মহামারির সময়ও দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রথমবারের মত ২০২১ সালে ১.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২২ সালে ১.৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। তিনি স্মরণ করেন, ২০১৭ সালে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদানকালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ৭০০ মিলিয়ন ডলার যা গত ০৬ বছরে দ্বিগুন হয়েছে এবং আগামীতে এ লক্ষ্যমাত্র ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, শুধু অর্থনৈতিক কূটনীতিতে নয়, কোভিড মহামারিতেও বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম উভয় সরকার একে অপরের পাশে দাড়িয়েছে। কোভিড মহামারির সময় বাংলাদেশে চিকিৎসা সামগ্রী অনুদারে জন্য ভিয়েতনামে সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বাংলাদেশ দূতাবাস কোভিড মহামারির সময়ে দূর্দশাগ্রস্থ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং খাদ্য ও অন্যান্য অনুদান কর্মসূচীর আয়োজন করে যেখানে রাষ্ট্রদূত নিজেও রক্ত দিয়েছেন। বন্ধুত্বের গভীর বন্ধনের আরেকটি অনুকরনীয় প্রতিফলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ০৭ মার্চের ভাষণ যা ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টরি হেরিটেজ হিসেব নিবন্ধিত ‘স্বাধীনতার আহ্বান’-এর ভিয়েতনামি অনুবাদ বাংলাদেশ দূতাবাস সম্পন্ন করে যা ২০২১ সালে ভিয়েতনামে রাষ্ট্রপতির কাছে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশে দূতাবাসের এই প্রকাশনা ভিয়েতনামের সকল বন্ধুদের কাছে পৌঁছ যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

 

তিনি আগামী ৫০ বছরে এবং তার পরেও দ্ইু দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগীতার বন্ধন আরও জোরদার করার আহবান জানিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

 

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং বলেন যে, বঙ্গবন্ধু আজকের নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে মনে করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে ভিয়েতনাম সরকারের বিশেষ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। 

 

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়ক একটি প্রামাণ্য চিত্র “Bangladesh’s Socio Economic Development” প্রদর্শন করা হয়। 

 

অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে বাংলাদেশী রসনা স্বাদে সান্ধ্য ভোজে আপ্যায়িত করা হয়।

2023-06-09