লিসবন, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪:
যথাযথ মর্যাদা ও ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পর্তুগাল-এর রাজধানী লিসবন-এ আজ (বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখ) বাংলাদেশ দূতাবাস মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছে। সকালে চ্যান্সারি প্রাঙ্গনে মান্যবর রাষ্ট্রদূত রেজিনা আহমেদ দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারির উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে দিবসটির কর্মসূচীর সূচনা করেন। পরবর্তীতে ক্যাম্পো মার্ত্রিস দ্যা পাত্রিয়া পার্কে স্থাপিত স্থায়ী শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে, স্থানীয় প্রশাসন, জুন্তা ফ্রেগেসিয়া দ্যা আরোইস-এর সহযোগিতায় দূতাবাস মূল কর্মসূচির আয়োজন করে। শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পর্তুগিজ এবং কিছু বিদেশী অতিথি ছাড়াও বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ও পরিবারের সদস্যরা এবং বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, আঞ্চলিক সমিতি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে শহিদ মিনার প্রাঙ্গন ব্যানার ও পোস্টার দিয়ে সজ্জিত করা হয়। এছাড়াও শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে ভাষা শহিদদের নিয়ে এক চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রদূত রেজিনা আহমেদ, জুন্তা ফ্রেগেসিয়া দ্যা আরোইস-এর প্রেসিডেন্ট মিজ মাদালেনা নাতভিদাদ, প্রাক্তন সংসদ সদস্য জনাব পেদ্রো আনাস্তাসিও এবং পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে নিয়ে ভাষা শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারপরে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, আঞ্চলিক সমিতি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীবৃন্দ শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। অতঃপর ভাষা শহিদদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর মহান শহিদ দিসব ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্যের উপর এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ এবং মানবাধিকার, সাম্য, মুক্তি সহ প্রভৃতি মূল্যবোধের উন্নয়নে ভাষা শহিদদের অনন্যসাধারণ অবদানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। জুন্তা ফ্রেগেসিয়া দ্যা আরোইস-এর প্রেসিডেন্ট মিজ মাদালেনা নাতভিদাদ তাঁর বক্তৃতায় ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং বলেন যে, বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতি তিনি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। প্রাক্তন সংসদ সদস্য জনাব পেদ্রো আনাস্তাসিও তাঁর বক্তৃতায় ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং সাংস্কৃতিক ও জনকল্যাণমূলক যেকোন উদ্যোগে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির সাথে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। উক্ত আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জনাব তিয়াগো মনতৈইরো ও পর্তুগালের লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক শিব কুমার।
রাষ্ট্রদূত রেজিনা আহমেদ তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি তৎকালীন উদীয়মান তরুণ রাজনৈতিক নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যিনি ভাষা আন্দোলনে তরুণদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন যে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল মাইলফলক যা বাঙালি জাতিকে তাদের অধিকার আদায়ের বৈধ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালে চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জিত হয়। তিনি আরও বলেন, এটি গর্বের বিষয় যে বাংলাদেশের ২১শে ফেব্রুয়ারী আজ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই হয়তো জানেননা যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বিশ্বের সকল মাতৃভাষা সংরক্ষণের লক্ষ্যে ইউনেস্কো কর্তৃক এ দিবসটি-কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাবনা প্রদান করা হয়। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের সন্তানদের পর্তুগীজ ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় কথা বলার বিষয়ে উৎসাহিত করার জন্য অনুরোধ জানান।
আলোচনা শেষে, সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পর্বে সমবেতকন্ঠে Ôআমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে দেশীয় খাবারের মাধ্যমে আমন্ত্রিত অতিথিবর্গকে আপ্যায়িত করা হয়।
পোর্তোঃ
বিকেলে রাষ্ট্রদূত, পর্তুগালের আরেকটি শহর পোর্তো-তে স্হাপিত স্হায়ী শহিদ মিনারে পোর্তোর স্হানীয় সরকারের প্রতিনিধিবৃন্দ, শিক্ষানুরাগী, গণমাধ্যম প্রতিনিধি ও প্রবাসী বাংলাদেশীসহ পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।