নিউইয়র্ক, ০৭ জুলাই ২০২২:
নিউইয়র্কস্থ বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্টান্ডিং(বি.সি.আই.ইউ)-এর প্রেসিডেন্ট পিটার টিচানস্কি কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের সাথে আজ ০৭ জুলাই ২০২২ তারিখে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল-এ সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতকালীন তাঁরা বর্তমান বিশ্ব পরিবর্তিত পরিস্থিতি প্রেক্ষাপট ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন। উভয়ই বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সম্পর্কে আরো গভীর ও সম্প্রসারিত করার উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ সময়ে কনস্যুলেটের প্রথম সচিব মিজ ইসরাত জাহান এবং বি.সি.আই.ইউ’র এশিয়া বিষয়ক প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, মিজ পেনি তাও উপস্থিত ছিলেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা বর্ণনা করে কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম বলেন যে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। এসময় বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের অর্থনৈতিক তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে ড. ইসলাম যোগ করেন বাংলাদেশের অর্থনীতি শুধু যে একটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে তাই নয়, বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে আজ বিশ্ব দরবারে স্বীকৃত ও সমাদৃত। কনসাল জেনারেল এ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ইউএস ডলার ছাড়িয়েছে যা একটি বড় অর্জন বলে অভিহিত করেন। তিনি তৈরি পোষাকের পাশপাশি ঔষধ, পাটজাত দ্রব্য, সিরামিক সামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির অপার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা, সাহসিকতা ও আত্মবিশ্বাসের এক অনুপম নিদর্শন বলে কনসাল জেনারেল মন্তব্য করেন। আঞ্চলিক দেশসমূহের সাথে ক্রমবর্ধমান কানেকটিভিটি, ভৌগোলিকভাবে কৌশলগত সুবিধাজনক অবস্থান, তরুণ কর্মশীল জনসংখ্যার আধিক্য, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স ও ট্যাক্স বর্হিভূত সুবিধাসমূহ বিবৃত করে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বিনিয়োগ বান্ধব গন্তব্য বলে আখ্যায়িত করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রণীত রুপকল্প-২০৪১, যার মধ্যদিয়ে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত ও উচ্চ আয়ের এক বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটবে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকার বিনিয়োগ সহায়ক নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি সকল প্রকার উদ্যোগ ও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে কনসাল জেনারেল জনাব পিটার টিচানস্কিকে অবহিত করেন। সরকার পরিকল্পিত বিকাশমান বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ ও হাই-টেক পার্ক নির্মাণ ও এর প্রাপ্ত সুবিধাসমূহের বর্ণনা দিয়ে ড.ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদেরকে আরও আন্তরিকভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আমন্ত্রণ জানান। এক্ষেত্রে তিনি অন্যান্যের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানী, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, তথ্য-প্রযুক্তি, অটো-মোবিল, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, পর্যটন, ও স্বাস্থ্য খাত সমূহের কথা বিশেষভাবে চিহ্নিত করেন।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে কনসাল জেনারেল যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা ও সৃজনশীলতার উপর আলোকপাত করেন এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান তথা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো জোরদার করনে তাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার কথা তুলে ধরেন। প্রেসিডেন্ট পিটার টিচানস্কি প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে দু’দেশের মধ্যকার সেতু বন্ধন হিসাবে আখ্যায়িত করেন।
প্রেসিডেন্ট পিটার টিচানস্কি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতা ও অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে ত্বরান্বিত করতে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে নিউইয়র্কস্থ বি.সি.আই.ইউ এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ বিষয়ক একটি অর্থনৈতিক সেমিনার করার বিষয়ে কনস্যুলেট ও বি.সি.আই.ইউ একসাথে কাজ করার ব্যাপারে তারা একমত পোষণ করেন।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও বি.সি.আই.ইউ এর মধ্যে আরও কার্যকরী ও অর্থবহ আলোচনা ও যোগাযোগের প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে বৈঠকের সমাপ্তি ঘটে।