ব্যাংকক, ২৬ মার্চ ২০২৪ :
বাংলাদেশ দূতাবাস, ব্যাংকক আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদযাপন করে। দিনের শুরুতে সকালে মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব মোঃ আব্দুল হাই দূতাবাস প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদতবরণকারী শহিদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য শহিদ সদস্য ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার শান্তি কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এরপর মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব মোঃ আব্দুল হাই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন যথাক্রমে দূতাবাসের মিনিস্টার (রাজনৈতিক) ও মিশন উপ-প্রধান মিজ মালেকা পারভীন, এনডিসি, মিনিস্টার (কনস্যুলার) জনাব হাসনাত আহমেদ এবং কাউন্সেলর (ইকনোমিক) জনাব সারোয়ার আহমেদ সালেহীন।
আলোচনা পর্বে দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং আগত অতিথিবৃন্দ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এর উপর তাৎপর্যভিত্তিক বক্তব্য প্রদান করেন। দূতাবাসের মিনিস্টার (রাজনৈতিক) ও মিশন উপ-প্রধান মিজ মালেকা পারভীন, এনডিসি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহিদ সদস্য ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ইত্যাদি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিনি সবাইকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান। এছাড়া, থাইল্যান্ড আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক জনাব নেয়ামত আলী তালুকদার বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ হতে আলোচনাপর্বে অংশগ্রহণ করেন।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব মো: আব্দুল হাই তাঁর বক্তব্যের শুরুতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে স্বাধীনতা দিবসের প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশের মহান বিজয় অর্জন, স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর কারাভোগ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ের উপর বক্তব্য প্রদান করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা ও দেশ গঠনের জন্য তিনি সকলকে আহবান জানান।
সকালের এ আয়োজনে সঞ্চালনায় ছিলেন দূতাবাসের কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান জনাব মোঃ মাসূমুর রহমান ।
দিবসটি উপলক্ষ্যে আজ দূতাবাসের উদ্যোগে স্থানীয় একটি হোটেলে কূটনৈতিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে স্বাগতিক দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অন্যান্য মন্ত্রণালয়, ব্যাংককস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকবৃন্দ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, ব্যবসায়ীবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দসহ প্রায় দেড় শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী H.E. Mr. Chada Thaised ।উভয় দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আজকের এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব মো: আব্দুল হাই তাঁর বক্তব্যের শুরুতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন চিত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আগামী দিনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষত পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রো রেল, ঢাকাএক্সপ্রেসওয়ে-এর মত বৃহৎ প্রকল্পে থাইল্যান্ডের কারিগরি সহায়তার জন্য তিনি থাই সরকারকে ধন্যবাদ জানান। WHO South-East Asia Region (SEARO) এর আঞ্চলিক পরিচালক পদে বাংলাদেশের প্রার্থী H.E. Ms. Saima Wazed কে সমর্থন দানের জন্য তিনি থাই সরকারের প্রশংসা করেন। BIMSTEC এর বর্তমান চেয়ার থাইল্যান্ডের নেতৃত্বে এটি আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে আরও সাফল্য লাভ করবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত থাইল্যান্ডে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার সাথে যৌথভাবে সম্পাদিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তাঁদের ধন্যবাদ জানান । বাংলাদেশের অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য তিনি ইটাল-থাই, সিপি গ্রুপ, মামা নুডলস, সিয়াম সিটি সিমেন্ট, সিয়াম সিমেন্ট, সিয়াম গ্যাস, চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়, চিয়াংমাই বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানান।
এরপর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি থাইল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী H.E. Mr. Chada Thaised তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা এবং দেশ গঠনে জনগণ ও বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণের পর ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় থাই অভিজ্ঞতা সহভাগিতার জন্য থাই সরকার প্রস্তুত বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, দ্বিপাক্ষিক পরিসরে এবং বিমসটেক-এর মত আঞ্চলিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ডের একসাথে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং এতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কূটনৈতিক সংবর্ধনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগত অতিথিবৃন্দকে বাংলাদেশি খাবারে আপ্যায়িত করা হয়।
উল্লেখ্য, বহুল প্রচারিত স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা (Bangkok Post) ও থাই ভাষার দৈনিক পত্রিকা (Naewna)-তে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে আজ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়।
এছাড়াও, দিবসটি উপলক্ষ্যে আগামী ৩০ মার্চ ২০২৪ তারিখ সন্ধ্যায় দূতাবাসের উদ্যোগে স্থানীয় একটি হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
কূটনৈতিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন দূতাবাসের মিনিস্টার (রাজনৈতিক) ও মিশন উপ-প্রধান মিজ মালেকা পারভীন, এনডিসি ।