২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪:
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল আজ বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ কনস্যুলেট ভবনে এবং নিউইয়র্ক কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরী’র সহযোগিতায় কুইন্স সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে যথাযোগ্য মর্যাদায় “মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪” উদযাপন করে। নিউইয়র্ক স্টেটের সিনেটর ও এ্যাসেম্বলী মেম্বার, বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেল ও বিদেশী কুটনীতিকগণ অংশগ্রহণ করেন। এসময় বিদেশী অতিথিদের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, নতুন প্রজন্ম ও কমিউনিটি সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম পর্বে কনস্যুলেটে দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষে একটি প্রামান্য চিত্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অমর একুশের কালজয়ী গানের ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল মোঃ নাজমুল হুদা “মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪” এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে ৫২’র সকল ভাষা শহিদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহিদ সদস্য, ৭১-এর সকল শহিদ, শহিদ বুদ্ধিজীবী এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
দ্বিতীয় পর্বে কুইন্স সেন্ট্রাল লাইব্রেরী, জ্যামাইকা’তে “মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪” উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কনসাল জেনারেল মোঃ নাজমুল হুদা তাঁর স্বাগত বক্তব্যে ৫২’র মহান ভাষা শহিদ সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ সকল শহিদের স্মৃতির প্রতি ও ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি আরও শ্রদ্ধা জানান মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহিদ, ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোন এবং সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামক এক স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল এবং তিনিই প্রথম বারের মত জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীর সাথে বাংলাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে, যা জাতি হিসেবে আমাদেরকে গৌরবান্বিত করেছে। তিনি বলেন ভাষা একটি একান্ত মানবিক বিষয় যা মানুষের অস্তিত্বের প্রায় সমার্থক। এটি সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত যে একজন ব্যক্তির বোধগত, বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক দক্ষতার সঠিক পুষ্টি তার মাতৃভাষার মাধ্যমে বিকশিত হয়। তাই নিজের মাতৃভাষা লেখা ও ব্যবহার করার অধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অপরিহার্য। ২১শে ফেব্রুয়ারী এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল চেতনা হল পৃথিবীর সকল ভাষা ও সংস্কৃতির নিজস্বতা রক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্যোগ গ্রহণ করায় সাধুবাদ জানিয়ে বহুভাষা ও বহুসংস্কৃতিবাদকে আরো প্রসারিত ও বিকশিত করার উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীর প্রেসিডেন্ট ডেনিস এম ওয়ালকট এবং ভারত, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া, পেরু ও থাইল্যান্ডের কনসাল জেনারেলসহ অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মেক্সিকো ও পোল্যান্ড কনস্যুলেটের কূটনীতিকবৃন্দ। দিবসটি উপলক্ষে নিউইয়র্কের কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট মি.ডোনাভান রিসার্ডস ও ফিলি্পাইনের কনসাল জেনারেল ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয় যা দর্শকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।
উল্লেখ্য, কনসাল জেনারেল মোঃ নাজমুল হুদা দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন । এছাড়াও তিনি সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত কুইন্স প্যালেসে অস্থায়ী শহিদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ০১ মিনিটে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।