অধ্যাপক এ-কে-আব্দুল মোমেন (আবুল কালাম আব্দুল মোমেন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি-এ (অনার্স) এম-এ ও এল-এল-বি এবং হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম-পি-এ এবং নর্থ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় (বস্টন) থেকে এম-বি-এ ও অর্থনীতিতে পি-এইচ-ডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
জীবনী
জনাব মোমেন সিলেট গভঃ পাইলট হাই স্কুল থেকে এস-এস-সি এবং এম-সি কলেজ থেকে এইচ-এস-সি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি-এ অনার্স ও এম-এ পাশ করেন এবং আইন শাস্ত্রে এল-এল-বি ডিগ্রী অর্জন করেন। মেধাবী হওয়ায় তিনি স্কুল জীবন থেকে শুরূ করে সারা জীবনই হরেক ধরনের স্কলারশীপ পেয়ে পড়াশোনা করেন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র থাকাবস্তায় তিনি কমার্স ব্যাংকে জুনিওর অফিসার হিসাবে কাজ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ২৩শে মার্চ্চর পর কাজ ছেড়ে চলে যান এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯শে ডিসেম্বর তিনি নব-গঠিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের একাধিক মন্ত্রনালয়ে চাকরি করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক সেনাবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে এবং বাংলাদেশ দখলদার মুক্ত হলে পরে তিনি তৎকালীন আঞ্চলিক প্রসাশক দেওয়ান ফরিদ গাজীর নির্দ্দেশে প্রথমত চা শ্রমিকদের ভারত থেকে স্বদেশে নিয়ে আসার কাজে ব্যাস্ত থাকেন এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘের “আনরব” অফিসের সহায়তায় চট্টগ্রম বন্দর থেকে চাল-ডেউটিন ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যসামগ্রী রাশিয়ান বিমানযুগে উত্তরবঙ্গের যুদ্ধবিধস্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত হন৷ তিনি সিলেটের আওয়ামীলীগ নেতা বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর একান্ত সচিব থাকাবস্থায় প্রবাসীদের উদ্দ্যেগে "ওয়েজ আর্নার স্কীম" চালু করেন যা ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের অন্যতম সফল নীতি এবং এর মাধ্যমে প্রবাসীরা নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করে স্বদেশে আনতে পারতেন। এই নীতিমালার ফলে দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ যেমন বাড়ে মুদ্রাস্ফীতিও কমে। তার এই পলিসি নব্বই দশক পর্যন্ত চালু ছিল এবং এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার দ্রব্য সামগ্রী আমদানী করা হয়। বঙ্গবন্ধুর সরকারে দেশে বন্যা ও দূর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি নারোর প্রেসিডেণ্ট ড. রবার্ট ডি হোমারের কাছ থেকে ৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান সংগ্রহ করেন। উল্লেখ্য যে নারো সরকারের সাথে তখনো ডিপলোমেটিক সম্পর্ক প্রতিস্টিত হয়নি।
ড. মোমেনের সৌভাগ্য যে তিনি বংগবন্ধুর সরকার ও তারই কন্যা শেখ হাসিনা সরকারে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। ১৯৬৯ সালে বংগবন্ধু যখন প্রেসিডেণ্ট আইয়ূব খানের আহ্বানে রাওয়াপিণ্ডিতে রাউণ্ড টেবিল বেঠকে যোগদান করেন তখন ড. মোমেন ছিলেন বংগবন্ধুর সার্বক্ষনিক সহকারী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ হলে থাকাবস্থায় ছাত্র মোমেন কেরম চেম্পিয়ান, টেনিস চেম্পিয়ান ও টেবিল টেনিস চেম্পিয়ানের পুরুষ্কার ছাড়াও বিভিন্ন খেলাধুলায় ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বহুবিধ পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি যখন এস-এম হলের বলিবল এবং বাসকেটবল কেপ্টেন ছিলেন তখন শেখ কামালকে এস-এম হল বলিবল ও বাস্কেটবলে সম্পৃক্ত করেন। এম-সি কলেজে থাকাবস্থায় তিনি "উষশী" নামে একটি উন্নত সাহিত্য ম্যাগ্যাজিন প্রকাশ করেন এবং তার এবং তার সহপাঠী সৈয়দ মোস্তফা কামালের উদ্যেগে কবি দিলওয়ারের ২য় বই ছাপাকলে প্রকাশিত হয়।
১৯৭৮ সালে "ফোর্ড ফাউন্ডেশন ফেলোশীপ" ও "হাভার্ড ম্যাসন ফেলোশিপ " নিয়ে তিনি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ট বিদ্যাপীঠ হাভার্ড ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়ন করতে যান এবং অর্থনীতি ও লোক প্রশাসনে এম-পি-এ ডিগ্রী অর্জন করেন। তাছাড়া নরওয়ের নোরাড স্কলারশীপ এবং এশিয়া ফাউনডেশনের ফেলোশীপও অর্জন করেন।
স্বদেশে বহুদেশীয় গনতন্ত্র পূনোরোদ্দারের জন্য আওয়াজ তুলায় বাংলাদেশের তৎকালীন সামরিক সরকার তাকে ”পি-ও-ওর্ডার-৯” এর বরাদ দিয়ে চাকরিচ্যূত করলে তিনি যুক্তরাস্ট্রে “কমিটি ফর ডিমোক্রেটিক বাংলাদেশ” প্রতিস্টা করেন। এই দূঃসময়ে বহু ধরনের কাজ করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে আইন সিদ্বভাব থাকার জন্য কাজের ফাকে ফাকে তিনি একাধিক ডিগ্রী অর্জন করেন। যেমন পি-এইচ-ডি (অর্থনীতি), এম-বি-এ (বিজনেস) ইত্যাদি ডিগ্রী অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেন। তিনি “বেস্ট শিক্ষক” হিসাবে ছাত্রছাত্রীদের আস্থা অর্জন করে পুরসকৃত হন। তিনি হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এম-আই-টি, নর্থ-ইষ্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সেলেম স্টেট ইউনিভার্সিটি, মেরিমেক কলেজ, কেমব্রীজ কলেজ, ম্যাসাচুচেস্ট ইউনিভার্সিটি (USMASS) এবং পরবর্তীতে ফ্রেমিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘ ২৩ বছর শিক্ষকতা করেন।
তিনি ওয়াশিংটনে ওয়াল্ড ব্যাংকেও (World Bank) অর্থনীতিবিদ হিসাবে কাজ করেন এবং ইউ-এন-ডি-পির কনসালটেণ্ট হিসাবেও কাজ করেন। ২০১৬ সালে তিনি ইউ-এন-ডি-পি ও ফাইনানস মন্ত্রনালায়ের জন্যে “সাউথ সাউথ কোপারেশন, ফাইনানসিং ফর এস-ডি-জি”—এর উপর একটি গবেষণাধর্মী রিপোর্ট প্রকাশ করেন। তার ২৫০টির অধিক প্রবন্ধ বিশ্বের বিভিন্ন জার্ণালে প্রকাশিত হয়। সম্প্রতিকালে তার দুটো বই; “বাংলাদেশের স্বাধীনতা: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি” এবং “Bangladesh: Marching Forward” প্রকাশিত হয়েছে। আরো দুটি বই; “বঙ্গবন্ধুর একশোটি ভাষণ” এবং “বাংলাদেশের উন্নয়ন” মুদ্রণের পথে। ইতিপূর্বে তার বন্ধু সিলেটের সৈয়দ মোস্তাফা কামাল ও সৌদী আরবের ছড়াকার দেওয়ান আব্দুল বাসেত তার লিখা প্রবন্ধসমূহ সংগ্রহ করে চারটি পুস্তক—“প্রবাসে স্বদেশ চিন্তা”, “আমলাতন্ত্রের দীর্ঘসূত্রিতা”, “মক্কা-মদিনার পথে প্রান্তরে” এবং “Collection of Articles and Speeches of Dr. A. K. Abdul Momen” প্রকাশ করেন।
তিনি প্রায় পাঁচ বছর রিয়াধে সৌদী আরব সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মণত্রনালেয় অধীনে সৌদী (ইণ্ডাসট্রিয়েল ডিভালাপমেণ্ট অথোরিটি) ইকোনোমিক এডভাইজার বা কনসালটেণ্ট হিসাবে কাজ করেন। সেই সময় তিনি সৌদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের উপর অমানবিক ব্যবহার বন্ধের জন্যে আন্দোলন শুরু করলে কিছু সংখ্যক আদম ব্যবসাহী তার বিরোধীতা করলে বিরোধী দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তাকে অভয় দেন এবং তার প্রচেস্টার ফলে শত শত শ্রমিকের উপর আত্যাচার বন্ধ হয় এবং এর ফলে কোম্পানীগুলো তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা বা মজুরী দিতে বাধ্য হয়। তাছাড়া ৫০ ডিগ্রী তাপমাত্রার অধিক তাপমাত্রা হলে শ্রমিকদের উনমুক্ত স্থানে কাজ করা বা বদ্ধ ভেনগাড়ীতে পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। আইন না মানলে ভূক্তভোগী শ্রমিকদের দেশ “ওয়াণ্ড ট্রেড অরগেনাইজেশনে” (WTO) ক্ষতি পূরণ দাবী করতে পারার নীতিও গৃহীত হয়।
বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত প্রতিস্টার জন্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে বহুবিধ প্রচেস্টা চালান এবং ১৯৮৮ সালে তার উদ্যোগে যুক্তরাস্ট্র কংগ্রেসে বাংলাদেশের উপর এক “শোণানীর” আয়োজন করা হয় যা এরশাদ সরকারের অবস্থানকে দূর্বল করে। তখন তিনি যুক্তরাস্ট্র কংগ্রেস, সিনেট ও সরকারে “মিস্টার বাংলাদেশ” নামে পরিচিতি লাভ করেন। ম্যাসাচুচেস্ট অঙ্গরাজ্যের গভর্নর তাকে "Ambassador of Good will" উপাধিতে ভুষিত করেন। তবে বাংলাদেশের সামরিক সরকার তাকে চাকরিচ্যূত করেন এবং দেশে আসা নিষিদ্ধ করেন। এতদ সত্বেও তিনি দেশের প্রতি প্রবল মমত্ববোধের কারনে দেশের দূর্যোগে সব সময় অগ্রণীর ভূমিকা পালন করেন এবং তার প্রচেস্টায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও জনগণ বিভিন্ন দূর্যোগে বাংলাদেশকে অনেক অনেক টাকা প্রদান করে এবং বাংলাদেশের দেয়া ঋন মাপ করে দেয় । তিনি ১৯৮৮ সালে মার্কিন যুক্তরাস্টের ডিমোক্রেটিক প্রেসিডেণ্ট পদপ্রার্থী মাইকেল ডুকাকিসের উপদেস্টা হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। তিনি বস্টনের “নিউ ইংল্যাণ্ড বাংলাদেশ সমিতির” সভাপতি ছিলেন এবং তিনি নর্থ আমেরিকা বাংলাদেশ সম্মেলন বা ফোবানার একজন প্রতিস্টাতা সদস্য এবং ১৯৮৯ সালে এর ৩য় সম্মেলনের চেয়ারম্যান নির্ব্বাচিত হন।
পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে মহিলা ও শিশু পাচার বন্ধ ও তাদের অমানবিকভাবে ক্রীতদাসের মতো ব্যবহার না করার জন্যে বিশেষ করে উটের দৌড়ে কচি শিশুদের ব্যবহার বন্ধের জন্যে তিনি বিশ্বব্যপী আন্দোলন শুরু করলে মার্কিন সরকারের চাপে তা বন্ধ হয় এবং তিনি অনেক মহিলা ও শিশুদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনেন। নারী ও শিশু পাচার বন্ধে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তাকে সহায়তা করেন। তাছাড়া যৌনদাস প্রথা এবং অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েদের যৌন বিকলাংগ এবং শিশু শ্রমিক বন্ধের জন্যে তিনি মার্কিন কংগ্রসে অনেকগুলো শোনানীতে (১৯৯১-১৯৯৬) জোরালো বক্তব্য প্রদান করলে প্রেসিডেণ্ট বিল ক্লিনটন তাকে সাক্ষাত দেন এবং দুটো আইনে সই করেন। ড. মোমেনের প্রচেস্টায় বাংলাদেশে গারমেণ্ট শিল্পে শিশু শ্রমিকের ‘মানবীয়’ সুরাহা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা তাকে এজন্যে বহুবিধ সম্মানে ভূষিত করে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারে এলে তার অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী সার্ক দশম শীর্ষ সম্মিলনে নারী ও শিশু পাচার বন্ধে তার দুটো প্রস্তাব পেশ করলে তা সর্ব সম্মতিতে গৃহীত হয়।
১৯৮৭ সালে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকা সফর করলে তার উদ্যোগে যুক্তরাস্ট্রে “বংগবন্ধু পরিষদ” গঠিত হলে তাকে এবং ড. এনায়েত রহিমকে যুগ্ন আহ্বায়ক নির্ববচিত করা হয় এবং ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে জয়লাভ করলে ড. মোমেন তাকে বস্টন ইউনিভারসিটির পক্ষ থেকে “ডক্টরেট” ডিগ্রী প্রদানের ব্যবস্থা করেন। এটাই জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রথম ডক্টরেট সম্মানণা ডিগ্রী।
১৯৯৮ সালে তিনি হজ্বব্রত পালন করেন। পৃথিবীর সবগুলো মহাদেশের প্রধান প্রধান দেশ ও রাজধানী ও শহরগুলো দেখার সৌভাগ্য তার হয়েছে।
২০০১ সালে সিলেটের কৃতী সন্তান স্পীকার হুমায়ূন রশীদ চৌধরী ইন্তেকাল করলে জননেত্রী শেখ হাসিনা মোমেন সাহেবকে ফোন করলে তিনি তার বড়ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে সিলেটের এক আসনে মনোনয়ন দিতে অনুরোধ করেন এজন্যে যে তিনি কাজের মানুষ, তার মেধা অতুলনীয়, দেশ উন্নয়নের জন্যে তার ভাবনা ও পরিকল্পনা সুদূর প্রসারী, তিনি একজন সৎ ও উত্তম ব্যক্তিত্ব। ২০০১ সালে তিনি মুহিত সাহেবকে নিয়ে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হলে মোমেন সাহেব তা তিন পর্বে প্রবন্ধ আকারে পত্রিকায় প্রকাশ করেন। পরবর্তিতে জনাব মুহিত সাহেব আরো অনেকের প্রবন্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগের সি-আর-আই (CRI) এর পক্ষ থেকে “কারচুপির নির্বাচন-২০০১” গ্রন্থটি প্রকাশ করেন।
২০০১-০৬ সালের বি-এন-পি-জামাত সরকারের নির্যাতন, লোটপাঠ, সণ্ত্রাস, ধর্ষণ, ক্রস-ফায়ার, জমি দখল-বাড়ী দখল, হল দখল, বাস স্টেশন ও অফিস দখল এবং মিথ্যাচার শুরু হলে এবং পরবর্তিতে ফকরুদ্দীন-মইন উদ্দিন সরকারে গণতন্ত্র বিঘ্নিত হতে থাকলে তার লেখনীও জোরদার হয়। ২০০৩ সালে তার বস্তনিষ্ট লেখনী ও প্রচেস্টার ফলে খালেদা জিয়ায় পছন্দের মনোনীত “ও-আই-সি সেক্টেটারী জেনারেল” পদপ্রার্থী যুদ্ধ-অপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরোদ্ধে তার প্রচেস্টা সফল হলে জননেত্রী তাকে অভিনন্দন জানান।
অধ্যাপক মোমেন যখন ফ্রেমিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটিতে “ইকোনমিকস ও বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের চেয়ারপার্সন” ছিলেন তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে প্রথমতঃ সৌদী আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগ দিতে সিদ্ধান্ত নেন এবং পরর্বতিতে তাকে জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে ২০০৯ সালে নিয়োজিত করেন। তিনি দীর্ঘ ছয় বছরের অধিক সময় অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে মাননীয় প্রধানমন্থীর নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৭শে নভেম্বরে সিলেটে ফিরে আসলে সিলেটবাসী তাকে সাদরে গ্রহণ করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিউ ইর্য়কের ঈদ উৎসবে উন্মুক্ত সভায় ঘোষণা দেন যে ‘আমি মোমেন সাহেবকে গুরু দায়িত্ব দেয়ার জন্যে দেশে নিয়ে যাচ্ছি”৷
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অধ্যাপক ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে ২০০৯ সালে গুরু দায়িত্ব দিয়ে জাতিসংযে নিয়োজিত করলে স্বীয় মেধা, কর্মদক্ষতা, কুটনৈতিক বিচক্ষণতা, প্রঞ্জা ও মানবিক গুণাবলী দিয়ে স্বীয় পদকে তিনি অলংকৃত করার পাশাপাশি বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্বল করেছেন। তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সাফল্য অর্জন করেছেন ।
দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের জন্যে অনেকগুলো দূর্লভ এ্যাওয়ার্ড বা সন্মান নিয়ে আসেন। তাঁর কূটনৈতিক দক্ষতা, অক্লান্ত পরিশ্রম, সবার সাথে বন্ধুত্ব এবং ধীশক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকার গোটা বিশ্বাসীর কাছে আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়।
তার অক্লান্ত পরিশ্রম, কর্মপরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাফল্যের কারণেই বাংলাদেশ সে সময়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে নেতৃস্থানীয় দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়। জাতিসংঘে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ড. এ কে আবুল মোমেনের সাফল্যের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে;
১। তিনি জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যান এবং ব্রণ্ড-নেইম স্থাপিত করেন।
২। বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব তিন তিনবার পালন করেন । মরহুম স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরির পর বালাদেশে তিনিই একমাত্র যিনি এ দায়িত্ব পালন করার সম্মান অজর্ন করেন।
৩। তিনি বিশ্ব ফোরামে বাংলাদেশকে “অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল" হিসেবে তুলে ধরেন।
৪। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্ৰ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রপথিক।
৫। দূর্যোগ মোকাবেলায় তিনি বাংলাদেশকে সমগ্র বিশ্বে “আনন্য উদাহরণরূপে” প্রতিষ্ঠা করেন।
৬। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের ছয় বছরে বাংলাদেশ যতগুলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে তার সব কটিতে (প্রায় ৫২টি) জয়লাভ করে। তার মেয়াদকালে বাংলাদেশ কোন নির্বাচনে কখনো পরাজিত হয়নি।
৭। ড. মোমেনন নিজেও বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়ে দেশের জন্যে সম্মান বয়ে নিয়ে আসেন। যেমন—(১) ইউনিসেফের প্রেসিডেন্ট, (২) সাউথ-সাউথ ইউ-এন হাইলেবেল কমিটির প্রেসিডেন্ট, (৩) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট, (৪) সেকেন্ড কমিটি বা ইকোনোমিক কমিটর চেয়ারম্যান, (৫) পীস কিপিং কমিশনের প্রেসিডেন্ট ও (৬) ভাইস প্রেসিডেন্ট, (৭) ক্রীডেনশিয়াল কমিটির প্রেসিডেন্ট, (৮) ইকোসক (ECOSOC ), (৯) ইউএনডিপি, (১০) ইউ-এন উইমেন, (১১) ইউ-এন-এফ-পি-এ ইত্যাদির ভাইস প্রেসিডেন্ট, (১২) কাউন্টার টেরোরিজমের ফেসিলিটেটর, (১৩) স্বল্প উন্নত দেশগুলোর (LDCs)চেয়ারম্যান দুই দুবার, (১৪) ন্যামের কোর্ডিনেটর, (১৫)সেক্রেটারী জেনারেলের সিনিয়র উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য, (১৬) এশিয়া-প্যাসিফিক রাষ্ট্রসমূহের চেয়ারম্যান প্রভৃতি । তাছাড়াও তিনি বিভিন্ন সংস্থার বোর্ড মেমবারও ছিলেন।
৮। তিনি জাতিসংঘের প্রধান ভবনের ভেতরই এক টুকরো বাংলাদেশ ---"বাংলাদেশ লাউঞ্জ" স্থাপন করতে সক্ষম হন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের মাত্র ৫টি দেশের এধরণের লাউঞ্জ আছে।
৯। অধ্যাপক মোমেনের প্রচেষ্টাতেই প্রায় ৩৭ বছর পর জাতিসংগের সদস্য পদ পাওয়ার পর নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সরকারের জন্যে একটি স্থায়ী মিশন এবং ৩৯ বছর পর রাষ্ট্রদূতের জন্যে একটি "স্থায়ী আবাস" ক্রয় করা সম্ভব হয়। এর ফলে প্রদেয় ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে সরকারের প্রায় ৪৫ হাজার ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। তাছাড়া বাড়ি ও অফিসের মালিক এখন বাংলাদেশ।
১০। তিনি বিএনপি সরকারের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া জাতিসংঘ রেডিও’তে বাংলা সম্প্রচার পুনরায় চালু এবং বাংলায় ওয়েব পেইজ চালু করেন।
১১। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন তাকে -Ambassador of Consensus Building এবং তার সহকারী বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ তাকে "আওয়ার লিডার বা আমাদের নেতা " হিসেবে সম্বোধন করতেন।
১২। প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাকে আখ্যায়িত করেন "জনতার রাষ্ট্রদূত"। জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচীতে তিনি প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করতেন।
১৩। নিউ ইয়র্কের বাংলা সাপ্তাহিক ‘বাঙালী” তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেছে- “রাষ্ট্রদূত মোমেনের লিগেসি অন্য কেউ পূরণ করতে পারবে কিনা সন্দেহ"।
১৪। রাষ্ট্রদূত থাকাবস্থায় ড. মোমেন পীস কিপিং-এ সর্বোচ্চ সংখ্যক সৈন্য, পুলিশ ও মহিলা পুলিশ নিয়োগে সক্ষম হন। এমনকি নৌবাহিনীর লোকদেরও নিয়োগের সুযোগ করে দেন।
১৫। রাষ্ট্রদূত থাকাবস্থায় পীস কিপিং-এ সর্বোচ্চ পরিমান ইকোপমেন্ট ভাড়া দিয়ে দেশের জন্যে অনেক অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অজর্ন করেন।
১৬। তিনি পীস কিপারদের মৃত্যুর কমপেনসেশন ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার ডলারে উন্নীত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
১৭। প্রায় বিশ বছর স্থগিত থাকার পর পীস কিপিং-এ অংশ গ্রহণকারী সৈনিকদের বেতন ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি প্রায় ৩৭% বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
১৮। তাঁর প্রচেষ্টার ফলে ঐ সময়ে ইউ-এন-ডি-পি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী সম্পদ পাঠায়।
১৯। তিনিই সর্ব প্রথম জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে বিজয় দিবস, জাতীয় শোক, একশে শহীদ দিবশ, নববর্ষ দিবসসহ সকল জাতীয় দিবস সমূহ পালনের রেওয়াজ চালু করেন। তার পূর্বে এগুলো কখনো বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে পালিত হয়নি।
২০। বিদেশী নাগরিক যারা মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তা দেন তাদের সম্মানণা দানের জন্যে তাঁর প্রস্তাবটি সরকার গ্রহণ করে অনেককে সম্মানণা দিয়ে প্রথমতঃ বিদেশী বন্দুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং দ্বিতীয়তঃ বিদেশে সরকারের বহু একনিষ্ঠ সমর্থক সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। ইতিপূর্বে তিনি ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধাণমন্ত্রীকে দিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিউ ইংল্যণ্ডের (বস্টনের) ১৫ জন বিদেশী যারা মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিলেন তাদের সম্মাননা প্রদান করেন।
২১। তার সময়ে বাংলাদেশ জতিসংঘে তিন তিনটি রিজোলিউশন বিশেষতঃ (১) মানুষের ক্ষময়াতন বা পিপুলস এমপাওয়ারমেন্ট, (২) অটোইজম ও প্রতিবন্ধী বিষয়ক এবং (৩) শান্তির সংস্কৃতি প্রস্তাবসমূহ সমযোতার মাধ্যমে সর্বসম্মতিতে পাশ হয়।
২২। অধ্যাপক মোমেন ১৯৯০-৯৬ সালে নারী ও শিশু পাচার বন্ধের জন্য বিশ্বব্যাপী এক জোরালো আন্দোলন শুরু করেন। বিশ্বের বড় বড় প্রচার মাধ্যম, বিবিসি, সি-এন-এন, এবিসি, এন বি-সি,সি-বি-এস, এন-এন,ইকোনমিস্ট, টাইম, মনিটর, বস্টন গ্লোব, নিউ ইয়র্ক টাইমস, এল-এ টাইমস, ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি জনমত গঠন করেন এবং জাতিসংঘেও তিনি নারী ও শিশু পাচার বন্ধের রিজুলিউশন পাশ করান ।
২৩। যুক্তরাষ্ট্রের ১৩২ জন প্রভাবশালী সিনেটর/কংগ্রেসম্যানের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে উটের ঝকি হিসেবে শিশুদের ব্যবহার বন্ধ করার জন্যে তিনি চিঠি সংগ্রহ করে চাপ সৃষ্টি করলে তা মোটামুটি বন্ধ হয়। পাচারকৃত অনেক শিশু ও মহিলাকে স্বদেশে ফিরিয়ে এনে তাদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থাও করেন।
২৪। তিনি শিশুশ্রম বন্ধের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীর যোনীদেশ বন্ধকরণ, নারী ও শিশু পাচার রোধকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, কমার্স ডিপার্টমেন্ট সহ বিভিন্ন ফোরামে এবং একাধিক গণ শুনানীতে জোরালো বক্তব্য রাখেন। ফলে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন উপযুক্ত আইন পাশ করেন এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে শিশু শ্রম বন্ধে “উইন উইন” মডেল সৃষ্টি হয়।
২৫। তিনি আমেরিকার মেডিকেল রিসোর্স ফাউন্ডেশনের (AMRF) এর মাধ্যমে বাংলাদেশে কয়েক কোটি টাকার মেডিকেল সরঞ্জামাদি পাঠান।
২৬। তিনি ১৯৭৪ সালে দূর্ভিক্ষের সময়ে নারোর প্রসিডণ্টের সাথে আলপ করে প্রধাণমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের জন্য তিন মিলিয়ন ডলার অনুদান সংগ্রহ করেন।
২৭। যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজীর একান্ত সচিব ছিলেন তখন তার উদ্যোগে ওয়েজ আর্নার স্কীম চালু করেন যা বঙ্গবন্ধু সরকারের অন্যতম একটি মাইলফলক। এই নীতিমালার ফলে প্রবাসীরা নিজেদের অর্থে স্বদেশে পণ্য রপ্তানী করতে পারতেন । ফলে স্বদেশে দ্রব্যের' অপ্রতুলতা যেমন কমে, মুদ্রাস্ফীতি ও হ্রাস পায়।
২৮। ১৯৯৩ তিনি সর্বপ্রথম প্রেসিডেণ্ট বিল ক্লিনটনের সহায়তায় বাংলাদেশী সেনাবাহিনীকে এবং পরবর্তিতে পুলিস বাহিনীর সদস্যদের হাইতিতে পীসকিপিং এ নিয়োজিত করেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, তিনি তখন সরকারে ছিলেন না (হাইতির নির্বাচিত তবে বিতাড়িত প্রেসিডেন্ট বিভারেণ্ড এরিসটিডডকে সরকারে বসানোর জন্যে তিনি প্রস্তাব দিলে মার্কিন প্রেসিডেণ্ট তা গ্রহন করেন)।
২৯। ডক্টর মোমেন যুক্তরাষ্ট্রে “কমিটি ফর ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ" প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর কো-কনভেনার নির্বাচন হন এবং দেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্টার জন্য নিরলস কাজ করেন ।
৩০। তাঁর প্রচেষ্টায় যুদ্ধ অপরাধী সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও-আইসির মহাসচিব পদে নির্বাচিত হতে পারেননি।
৩১। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হবার পূর্বে তিনি ফ্লেমিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস ও ইকোনমিক বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি অধ্যাপনায় স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহন করলে তার বিশ্ববিদ্যালয় তাকে “এমিরেটাস প্রফেসার” সম্মানে ভূষিত করেন।
৩২। ড. মোমেন বহু মানবিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন । যেমন-তিনি বাংলাদেশ তৃতীয় ফোবানা সম্মেলনের চেয়ারম্যান (১৯৮৯), বস্টনের নিউ ইংল্যান্ড সমিতির সভাপতি (১৯৮৭-৮৯),আমেরিকার এন্টি-স্লেভারি এলায়েন্স-এর পরিচালক, বস্টনের উইমেন ও চিলড্রেন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামাইন এসোসিয়েশন, জালালাবাদ এসোসিয়েশন, বস্টনের নিউ ইংল্যান্ড ইসলামিক সোসাইটি ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির আজীবন সদস্য ।
৩৩। তিনিই জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনে বাংলাদেশ বিষয়ক দু'টি প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ: কান্ট্রি অব ইমটপাওয়ারিং পিপল’ ও ‘বাংলাদেশ : ফরটি ইয়ারস ইন দি ইউ এন' প্রকাশ করে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। এছাড়া রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ সমূহের বিবরণ ‘বাংলাদেশ মার্চিং টুয়ার্ডস প্রোগ্রেস' শীৰ্ষক পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিতরণ করেন। তিনি একজন স্বনামখ্যাত কলামিস্ট, লেখক এবং তার কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া কয়েক শো প্রবন্ধ স্বদেশী-বিদেশী জারন্যাল বা মেগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
৩৪। তিনি বর্তমানে “চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ” এর চেয়ারম্যান, “বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট” এর চেয়ারম্যান, এবং “বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির” সভাপতি পদে দায়িত্বরত আছেন। তাছাড়া তিনি সি-বি-ডি-এল এবং বাংলাদেশ ইনসটিটিউটি অব কেপিটাল মার্কেটের (বি-আই-সি-এম) পরিচালক এবং ঢাকাস্থ ‘আমেরিকান ইউনিভারসিটি অব বাংলাদেশে (এ-আই-ইউ-বি) এর পারটাইম অধ্যাপক। তিনি Diplomats নামক ইংরাজী মাসিকের সম্পাদক।
৩৫। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক হানাদার বাহিনী তাঁকে বন্ধী করে এবং নির্যাতন করে । বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে তিনি যার সাথে মিলে কাজ করতেন সেই অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহমদকে ঘাতকরা বিজয়ের দুদিন আগে হত্যা করে ।
এমিরেটাস অধ্যাপক ড. এ কে আন্দুল মোমেন একজন মননশীল প্রবন্ধকার, নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষাবিদ, নিষ্ঠাবান গবেষক, মানব দরদী সমাজসেবক এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হিসেবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। অধ্যাপক ড, এ কে আব্দুল মোমেন দীর্ঘ সাড়ে ৩৭ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে ২০১৫ সালের ২৭শে নভেম্বর সিলেটে ফিরে এলে হাজার হাজার সিলেটবাসী তাকে সাদরে গ্রহন করেন।
অধ্যাপক ড. মোমেনের পরিবার
সিলেটের কৃতি-সন্তান, সারা দেশের গৌরব, দেশবরেন্য অর্থনীতিবিদ, আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিবিদ, নারীর ক্ষ্মতায়নের মহান উদ্দ্যেগক্তা, শিক্ষাবিদ, নিবেদিত প্রান, স্বাধিনতা চেতনার অতন্দ্র প্রহরী ইমিরেটাস প্রফেসার আবুল কালাম আব্দুল মোমেনের (এ-কে আব্দুল মোমেন)জন্ম ও বাড়ী সিলেট শহরে৷ দেশে ও প্রবাসে সর্বত্র তার বিচরন থাকলেও তার প্রান, মন আর কর্মতৎপরতা সিলেটকে ঘিরে। সিলেটের যে কোন সমস্যা সংকটে অথবা প্রয়োজনে তিনি সবসময় ছিলেন, আজও আছেন এবং ভবিষতেও সিলেটবাসির পাশে থাকবেন। সিলেট শহরের প্রখ্যাত আইনজীবী, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ততকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের কর্ণধার এডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ সাহেবের ৬ষ্ঠ পুত্র ড. এ, কে, আব্দুল মোমেনের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৩শে আগষ্ট। তাঁর মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরী ছিলেন অত্যন্ত সমাজসচেতন মহিলা যিনি সিলেটের প্রায় সকল স্কুল-কলেজের উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে সংপৃক্ত ছিলেন। তিনি আমৃত্যু সিলেট মহিলা সমিতির সভানেত্রী এবং ১৯৪৫-৫০ সালে সিলেট মুসলিম মহিলা লীগের সহ-সভানেত্রী ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তার অবদান গৌরবদীপ্ত৷ তার দাদা খান বাহাদুর আন্দুর রহিম ছিলেন "আসাম সিভিল সার্ভিসের’ একজন উর্ধতন কর্মকর্তা এবং সিলেটের সব কটি মহকুমায় যেমন সিলেট সদর, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ইত্যাদিতে দীর্ঘদিন এস-ডি-ও বা মহকুমা অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তার পরিবারের সকল সদস্য ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী। তাঁর বাপের মামা জনাব আবদুল হামিদ (পাঠানটুলা) ছিলেন তার সময়ের একজন খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও প্রখ্যাত জননেতা । জনাব হামিদ ১৯২৪-৩৭ সালে আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য-সভাপতি ও মন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীকালে (১৯৪৭-৫৪ সাল পর্যন্ত) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন । তাঁর আর এক দাদা এস, এম, আকরাম পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তিনি পূর্ব বাংলার গভর্নরের দায়িত্বও পালন করেন। তার নানা ছিলেন জগন্নাথপুরের সৈয়দপুর গ্রামের প্রখ্যাত জমিদার সৈয়দ আবুল বাশার চৌধুরী। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীর বিভাগীয় স্কুল পরিদর্শক ও স্টেট কাউন্সিলের সদস্য সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের নেতা সিলেটের দ্বিতীয় মুসলমান গ্রাজুয়েট দানবীর মৌলভী আব্দুল করিম ছিলেন জনাব মোমেন -এর বড় আব্বা । তাঁর নিজের ফুফু সাহেরা খাতুন ছিলেন সিলেটের প্রথম মুসলিম মহিলা গ্রাজুয়েট এবং তার বোন ডাঃ শাহলা খাতুন সিলেট জেলার প্রথম মুসলিম মহিলা এম-বি-বি-এস (ঢাকা), এম-আর-সি-ও-জি (এডিনবরা) এফ-আর-সি-ও-জি (লডন), এফ-আই-সি-এস (ইউ-এস-এ)। তিনি “জাতীয় অধ্যাপকের” মর্যাদায় অধিস্টিত হন৷ তারা সাত ভাই ও পাঁচ বোন। সবাই উচ্চশিক্ষিত--দেশে ও বিদেশে তারা স্বনামে পরিচিত এবং তার স্ত্রী সেলিনা মোমেন স্বাস্থ্য সেবা প্রফেশনাল। তাদের পাঁচ সন্তানদের মধ্যে তিনজন মেয়ে এবং দুইজন ছেলে। তারা সবাই আমেরিকা প্রবাসী সবাই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্টিত। তার বড়ভাই মরহুম অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ আব্দুল মুহসি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ২য় ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী। ৩য় ভাই শেলী-এ-মুবদি যুক্তরাস্টে বসবাস করেন। ৪র্থ ভাই আবু সালেহ আব্দুল মুইজ ডেল্টা ইনসুরেন্সের বড় সাহেব। ৫ম ভাই ড. আবুল কাশেম আব্দুল মুবিন প্রাক্তন সচিব। তার ছোটভাই আবুল বাসার আব্দুল মুমিত নিউ ই্য়র্কে একজন ব্যংকার। তার বড়বোন ডাঃ শাহলা খাতুন, স্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও ‘জাতীয় অধ্যাপক’। তার ছোটবোন শীপা হাফিজা নারী নেত্রী।
স্বদেশে ফিরে আসলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে সিলেটে কাজ করতে বলেন এবং তিনি একাধিক প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেন যার কিছু তথ্য নিম্নে লিপিবদ্ধ হলো। যে যে বিষয়ে ড. এ-কে আব্দুল মোমেন সাম্প্রতিকালে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন তার কিছু নমুনা তুলে ধরা হলোঃ
দৃশ্যমান অবকাঠামো
ক)রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন
১) সিলেট - ঢাকা ৪+২ লেনে উন্নীতকরনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় তদবির ও অনুমোদন। ১৯৯২ সালে চার লেনে রাস্তাটি সপ্রসারণের দাবী উঠলেও তা এখনো পড়ে আছে।
২) সিলেট-বাদাঘাট ৪-লেনের বাইপাশ অনুমোদন
৩) সিলেট-সালুটিকর-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ রাস্তার বাজেট অনুমোদন ও উন্নয়ন কাজ চলছে
৪) ত্রীমূখী থেকে নব-নির্মিত কেন্দীয় জেলের রাস্তার উন্নয়ন
৪) সিলেট উসমানী বিমানবন্দর থেকে চৌকিদীঘি চারলেনে উন্নিতকরনের নীতিগত সিধান্ত
৫) আম্বরখানায় ত্রিমূখী ফ্লাইওভারের সুপারিশ প্রদান
৬) সিলেট-জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার ও অন্যান্য রাস্তার উন্নয়ন
৭) সিলেটে ভবিষ্যতে যানজট কমানোর জন্য দুই-দুইটি রিং রোড নির্মান। তাছাড়া বিশ্বের সবদেশে যেখানেই নদী আছে, সেখানেই নদীর উভয় তীর ঘেষে দৃস্টি-নন্দিন রাস্তা থাকে, সিলেটেও তার সুযোগ রয়েছে, ইত্যাদি।
খ) বিমান
সিলেট উসমানী এয়ারপোর্টকে সত্যিকার ভাবে আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে উন্নতকরণের জন্য কয়েকগুন সম্প্রসারণ, ৬/৮ টি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, রানওয়ে বৃদ্ধি, এয়াপোর্টে বিরাট মডার্ণ Tax-Exempt Mall তৈরী ইত্যাদি যাতে এটি অত্র অঞ্চলের এমনকি করিমগঞ্জ, শিলং ইত্যাদির Airport Hub হয় এবং এইখান থেকে বিমান বিভিন্ন দেশে সরাসরি যেতে পারে।
গ) নদী
সুরমা-কুশিয়ারা নদীর নব্যতা বৃদ্ধি করে নৌ চলাচলের সুব্যবস্থা। সারা বছর যাতে বাংলাদেশের একমাত্র River Cruise যা সুরমা নদীতে চালু আছে তা সহজজতর করা।
ঘ) রেল
ঢাকা-সিলেট এবং সিলেট-চট্রগ্রাম রেল লাইন ডাবল লাইন তৈরি করে যাতে ৩/৪ ঘন্টায় যাতায়াত সম্ভব হয়। তাছাড়া আধুনিক রেল ও কমপার্টমেণ্টের ব্যবস্থা করা। দূর্ভাগ্যবশতঃ সিলেট-চাটগা লাইনে একটিও এসি কমপার্টমেণ্ট নেই। তাছাড়া সবগুলো কমপার্টমেণ্ট আদিকালের, ময়লা, দূর্গন্ধযুক্ত যেখানে ইদুর, তেলাপিকা ও ছারপোকা রয়েছে।
ঙ। শ্রীমঙ্গলে দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপন
তার প্রচেস্টায় প্রায় ৬৭ বছর পর গেল বছর বৃহত্তর সিলেটের শ্রীমঙ্গলে দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপিত হলো। তবে এখনো আরো কাজ বাকী আছে।
চ। তিনি মনে করেন অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা ত্বরান্বিত হবে।
ছ। সিলেটকে দৃষ্টি নন্দিন ও Environment Friendly নগরে পরিবর্তন করন।
জ। সিলেটের সুরমা নদী, চা-বাগান, নদীনালা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অক্ষুন্ন রেখে নাগরিক সুবিধাদি যাতে বৃদ্ধি করা যায় তার জন্য "আগামীর সিলেট" মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সব দেশে নদীর তীর ধরে প্রধান প্র