০৪ জুন ২০২১:
তুরস্কে বাংলাদেশের সুনামবৃদ্ধি ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বলকরণ ও বহি:বিশ্বে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরার জন্য স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশহিসেবে ইস্তাম্বুলস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউ সার্চেস ইনিসিয়েটিভ প্লাটফরম এসোসিয়েসিশনের সাথে যৌথভাবে ০৪ জুন ২০২১ তারিখে ‘জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অর্থনীতি’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনার আয়োজন করে । বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব আহমেদ চস্কুনাইদিনের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে কনসাল জেনারেল মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম, নেদারল্যান্ডসের কনসাল জেনারেল জনাব বার্ট ভন বলহুস, ইনিসিয়েটিভ প্লাটফরম এসোসিয়েসিশনের সভাপতি জনাব জালাল তোপরাক, দোগানলার হোল্ডিং এর চেয়ারম্যান জনাব দাভুট দোগান সহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
কনসাল জেনারেল মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম তার বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ এবং অভিযোজন বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নানা পদক্ষেপ ও কর্মসূচি তুলে ধরেন। জনাব ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রতিকূলতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অনন্য দক্ষতা ও অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ২০০৯ সালে নিজস্ব অর্থায়নে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ‘ক্লাইমেট ট্রাস্ট তহবিল’ গঠন করে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের নজর এবং প্রশংসা কেড়েছে বলে, তিনি যোগ করেন। ভবিষ্যত প্রজন্ম সুরক্ষায় এবং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছে। কনসাল জেনারেল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে ১০০ বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানী হিসাবে সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্সে (আইএসএ) বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ৪০ লাখের বেশী সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনকারী দেশ বাংলাদেশ।
প্যারিস চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু অর্থায়ন, কার্বন নিঃসরণ প্রশমন ও অভিযোজন কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুদৃঢ়করণের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম- সিভিএফ এবং ভি-২০ (ভালনারেবল টুয়েন্টি) এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ও প্রশমনের প্রচেষ্টাসমূহে নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে, কনসাল জেনারেল যোগ করেন। এছাড়াও, ডেল্টা কোয়ালিশন কাঠামো কর্মসূচির মধ্যে সারা বিশ্বের বদ্বীপ অঞ্চলগুলোকে নিরাপদ ও অর্থনৈতিকভাবে টেকসই করতে বাংলাদেশ অবদান রাখছে । কনসাল জেনারেল তুর্কি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্প (প্ল্যাস্টিক ও গার্মেন্টস) এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ করার আহবান জানান। তিনি বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে তুরস্কে পাট ও পাটজাত দ্রব্য আমদানি এবং বাংলাদেশে সৌরশক্তি এবং প্ল্যাস্টিক ও তৈরিপোষাক পুনর্ব্যবহারযোগ্য শিল্প বিনিয়োগ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বক্তাগণ স্ব স্ব দেশের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কৌশল ও কর্মসূচি বর্ণনার পাশাপাশি এ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার প্রণীত নীতি ও পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন । উপস্থিত তুর্কি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীগণ জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে জড়িত ক্ষেত্রসমূহে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভবতা যাচাইয়ের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।